তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে জরুরি সেবাখাতের আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে চলমান বিধিনিষেধে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারসহ আইটি পণ্য সরবরাহে বাধা না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
একইসঙ্গে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের সমস্যা হলে তা সল্যুশনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র যাচাই করে চলাচলের অনুমতি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
বুধবার (৪ জুলাই) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মন্ত্রী বলেন, এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় গৃহীত হয়েছিল। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু কখনো কখনো এটি মানা হচ্ছিল না। ৩ আগস্ট সংশ্লিষ্টদের কাছে আবার চিঠি দেয়া হয়েছে।
‘তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে জরুরি সেবাখাতের আওতায় এনে বিধিনিষেধ চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারসহ আইটি পণ্য সরবরাহ ও সল্যুশনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
এদিকে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিটি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার, দেশের সব জেলা প্রশাসক ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধে যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, খাদ্য, শিক্ষা, গণমাধ্যমসহ এসব খাতকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখছে।
কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এসব কার্যক্রম সচল রাখতে তথ্যপ্রযুক্তির সব সেবা অনলাইনে দেয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এসব সেবা কার্যক্রম সক্রিয় রাখার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে জরুরিসেবা হিসেবে বিবেচনা করে হার্ডওয়্যারসহ আইটি পণ্য সরবরাহকারী ও সল্যুশন দেয়া প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জনবলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্ভিসগুলো চালু রাখতে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পণ্য সরবরাহ ও সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হোক। একই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত জনবলের চলাচলের অনুমতি দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে জরুরিসেবার আওতায় আনার জন্য গত ১১ জুলাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে আবেদন জানায় বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। বিসিএসের সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবারের লকডাউনে তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে জরুরিসেবার আওতায় আনা হয়েছে।
বিসিএসের আবেদনে সাড়া দেয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, দেশে এখন এমন কোনো খাত নেই যেখানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নেই। প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা প্রথম থেকেই হার্ডওয়্যার খাত ও সেবাদানে গুরুত্ব দেয়ার জন্য সরকারকে অবহিত করে এসেছি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, বিসিএস সদস্যদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি ও করোনা মহামারি সংক্রান্ত অন্যান্য সব সরকারি নির্দেশনা মেনেই ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুরোধ করছি। এই ঘোষণার অপব্যবহার করে যেন আমাদের এই অর্জনকে আমরা ম্লান না করে ফেলি এ ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ই-কমার্স ও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান লকডাউনের আওতামুক্ত থাকলেও হার্ডওয়্যার খাত এই প্রথম লকডাউনের আওতামুক্ত হলো।