সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে ‘রিং আইডি’। ফেসবুকের মতো এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও বিনামূল্যে ভয়েস ও ভিডিও কল, মেসেজিং ও গোপন চ্যাটিং করা যায়। কানাডায় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হলেও এর প্রায় সব কার্যক্রম বাংলাদেশ ঘিরে। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম বলা হলেও মূলত বাংলাদেশিদের জন্যই তৈরি হয়েছে রিং আইডি। এখানে সোশ্যাল কমার্স (সামাজিক বাণিজ্য) নামে গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি করা যায়। এসব পণ্যের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে চলতি বছরের মার্চে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে ব্যাপক পরিসরে গ্রাহক বানানোর কাজ শুরু করলে দেখা দেয় সন্দেহ।
রিং আইডি নামের সাথে কাজের তেমন একটা মিল নেই। এইটা একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জাতীয় অ্যাপ্লিকেশান।মানে এইখানে মেসেজ, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি পাঠানো যায়। পাশাপাশি এইখানে আপনি বিভিন্ন টিভি শো দেখতে পারবেন।আর আমাদের দেশের তরুণদের যে বিষয়টি সবথেকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল সেটি হলো এই জায়গা থেকে আয় করা যায় আর বিকাশ, রকেট ও পে প্যাল থেকে ক্যাশ আউট করা যায়। পদ্ধতিটি অনেকেই ফেসবুক এ হয়ত এতো দিনে একবার হলেও দেখেছেন।
চলুন জেনে নেই কিভাবে এমন একটি অ্যাপ্লিকেশান গ্রাহকদের সাথে বাটপারি করে।
রিং আইডি তে আপনাকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে শুধু একটি ফোন নাম্বার থাকলেই চলবে। আর অ্যাকাউন্ট খুললে আপনাকে অন্য একটা আইডির রেফার কোড দিতে হবে আর এটা করলে আপনার অ্যাকাউন্ট এ প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা চলে আসবে আর আপনি চাইলে এই টাকা বিকাশ, রকেট বা পে প্যাল দিয়ে ক্যাশ আউট করে নিতে পারবেন।
আর এটা করলে শুধু আপনারই যে টাকা আয় হবে তা কিন্তু নয়, আপনি যার রেফার কোড ব্যবহার করেছেন তারও টাকা আয় হবে। তাহলে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে এত টাকা আসে কোথা থেকে? হ্যাঁ, এখানেই মূল খেলা। আপনি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সেখান থেকে উঠাতে পারবেন। সেই রিং আইডি ধীরে ধীরে আপনার এই সীমা কমিয়ে দেবে আর একসময় তারা আপনার এই ক্যাশ আউট অপশনকেই বাতিল করে দিবে।
গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নিতে রিং আইডির নতুন ফাঁদ!
তাহলে যে টাকা পরে থাকবে সেটা দিয়ে কী করবেন? এই অ্যাপ্লিকেশান এর মধ্যেই একতা অনলাইন শপ আছে যেখান থেকে আপনি চাইলে বিভিন্ন জিনিস যেমন কলম থেকে শুরু করে বডিস্প্রে ইত্যাদি কিনতে পারবেন। তবে সেখানে দাম দেখলে আপনার চক্ষু চড়াক গাছ হয়ে যাবে। কারণ সেখানে সব জিনিসের দামই কয়েক গুণ পরিমাণ বেশি।
একজন ভুক্তভোগী জানান যে তিনি একটি ২০০ টাকার বডিস্প্রে ১,৪০০ টাকা দিয়ে অর্ডার করেছলেন কিন্তু কয়েক মাস হয়ে গেলেও সেই বডিস্প্রে তিনি পান নি। এখন হয়ত বুঝতে পারছেন যে তারা কিভাবে মানুষদের এত টাকা দেয়।
এবার সিদ্ধান্ত আপনার।আপনি চাইলেই এই প্রতারনার শিকার হতে পারেন আবার চাইলেই অন্যকে এই তথ্য জানিয়ে সতর্ক করতে পারেন।ভাল হবে যদি আপনি নিজে সচেতন থেকে অন্যকেও সচেতন করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রিং আইডি খানিকটা ভিন্ন আঙ্গিকে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসাই করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে তিন ক্যাটাগরিতে এজেন্ট হওয়া যায়। এর মধ্যে ডায়মন্ড ক্যাটাগরির এজেন্ট হতে পাঁচ লাখ টাকা, গোল্ডেন দুই লাখ টাকা এবং সিলভার ক্যাটাগরির এজেন্ট হতে এক লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। এজেন্ট হওয়ার পর তারা রিং আইডির অফিসিয়াল প্রতিনিধি হিসেবে ব্র্যান্ড প্রমোটার নিয়োগ করতে পারেন। ১২ হাজার টাকায় সিলভার এবং ২২ হাজার টাকায় গোল্ড ক্যাটাগরির ব্র্যান্ড প্রমোটার নিয়োগ করেন তারা। এ ছাড়া এক বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকায় ভিভিআইপি এবং ১৫ হাজার টাকায় ভিআইপি সদস্যপদ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রবাসী ক্যাটাগরিতে বিনিয়োগ করেও প্রতিদিন এক হাজার টাকা আয়ের লোভনীয় অফার রয়েছে। এ ছাড়া ‘সোশ্যাল কমার্স’ নামে পণ্য বেচাকেনায়ও এসব এজেন্ট ও ব্র্যান্ড প্রমোটারদের জন্য রয়েছে কমিশন।