একটি শব্দও উচ্চারণ না করেই ইতালির ২১ বছরের খাবি ল্যামের টিকটক অনুসারীর সংখ্যা ১১ কোটি। তাঁর হাস্যকর অভিব্যক্তির জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী বেশ পরিচিত। টিকটকে তাঁর এখন অবস্থান দ্বিতীয়। জানাচ্ছেন আল সানি
লাইফ হ্যাকসের পাঁচ মিনিটের ভিডিওগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খাবি ল্যাম এসব কাজ করে দেখান মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই। কলার খোসা ছাড়ানো থেকে শুরু করে গাড়ি চালানো সবই করে দেখান তিনি। মজা করে বাঙালি টিকটক ব্যবহারকারীরা তাঁর নাম দিয়েছে ‘মুশকিল আসান বাবা’। একটি মাত্র শব্দ উচ্চারণ না করেই সব সমস্যার সমাধান আছে তাঁর কাছে। এতেই বাজিমাত! নেট দুনিয়ায় কয়েক কোটি মানুষ এখন খাবি ল্যামের নিয়মিত অনুসারী।
খাবি ল্যামের বসবাস ইতালির চিভাসোতে। গত বছরের প্রথম দিকে করোনার প্রকোপ বাড়ার সময় ইতালির কয়েক লাখ পেশাজীবী চাকরি হারান। কারখানায় শ্রমিকের কাজ করা খাবিও ছিলেন চাকরি হারানোদের দলেই। এরপর তিনি ফিরে আসেন তাঁর মা-বাবার ছোট বাসায়। খাবির বাবা ছিলেন সেনেগালের অধিবাসী। তিনি প্রতিনিয়ত খাবিকে নতুন কাজের সন্ধান করতে বলেন। কিন্তু শ্রমিকের কাজে আর মন টানে না খাবির; মন পড়ে থাকে টিকটকেই। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে ভিডিও বানিয়ে পোস্ট করতে শুরু করেন তিনি ‘খাবি ল্যাম’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে। প্রথম দিকে খাবি তাঁর ভিডিওগুলোতে ইতালীয় সাবটাইটেল যোগ করতেন। সেসব ভিডিও দর্শককে খুব একটা টানেনি। তবে শব্দ না বলা নির্বাক ভিডিওই সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করে মানুষ। এখন টিকটকে ল্যামের অনুসারী ১১২ মিলিয়ন আর সব মিলিয়ে তাঁর ভিডিও দেখা হয়েছে ১.৭ বিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ১৭০ কোটিবার।
টিকটকে ভিডিও বানানোর বেশ কিছু অপশন আছে। তার মধ্য ডুয়েট সবচেয়ে জনপ্রিয়। খাবি ল্যাম ডুয়েট ও স্টিচ নামের দুটি অপশনকে তাঁর ভিডিও বানানোর মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। মূলত ডুয়েটে ব্যাপারটা দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে হয়। প্রথমে একজন নির্মাতা একটি ভিডিও বানিয়ে পোস্ট করেন, অন্য কেউ চাইলে সেই ভিডিওর সঙ্গে নতুন ভিডিও যুক্ত করতে পারেন। প্রথম ও দ্বিতীয় দুটি ভিডিওই একসঙ্গে পাশাপাশি চলতে পারে। অন্যদিকে স্টিচে প্রথম ভিডিও দেখানোর পর, দ্বিতীয় ভিডিও নির্মাতা তাঁর ভিডিও যুক্ত করে থাকেন। খাবি ল্যামের বিশেষত্ব এখানেই! টিকটকের টপ লিস্টে থাকা ভাইরাল ভিডিওগুলোকে তিনি প্রথমে বাছাই করতেন; তারপর সেই বাছাইকৃত ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে সেটাই সহজ করে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা শুরু করেন।
টিকটকের দর্শকরাও নতুন ধারার ভিডিওর স্বাদ নিতে থাকে আর সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে খাবির ভিউস ও অনুসারীর সংখ্যাও।
প্রতি মাসে ইতালিতে গড়ে সক্রিয় টিকটক ব্যবহারকারী ৩০ থেকে ৪০ লাখ। এর মধ্যে বেশির ভাগ সক্রিয় ব্যবহারকারী অনুসরণ করে খাবি ল্যামকে। তবে খাবির মতে, ইতালির চেয়ে বাইরের দেশে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা বেশি।
সেই ভক্তরা ইংরেজি, জার্মান, আরবি, পর্তুগিজ, স্প্যানিশসহ বেশ কিছু ভাষায় খাবি ল্যামের নামে ফ্যান পেজ পরিচালনা করে থাকে।
১১ বছর বয়স থেকে ইতালিতে থাকলেও এখনো তিনি সে দেশের নাগরিকত্ব পাননি।
খাবি ল্যামে এখনো তাঁর বড় ভাইয়ের সঙ্গেই থাকেন। তাঁর ছোট ঘরের একদিকের দেয়ালে সেনেগালের পতাকার পাশাপাশি রেখেছেন প্রিয় ক্লাব জুভেন্টাসের স্কার্ফ। আর তাঁর ধারণকৃত সব ভিডিও করা হয় পুরনো এক স্মার্টফোনে।
প্রতিদিন নতুন নতুন ভিডিও সেই পুরনো মোবাইলে ধারণ করেই সবার সামনে হাজির হন খাবি।
এরই মধ্যে নজর কেড়েছেন বিশ্বের বেশ কিছু টেকজায়ান্টদের। কয়েক মাস আগেই ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ কমেন্ট করেন খাবি ল্যামের ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে।