করোনাভাইরাসের কারণে চাকরির বাজার ছোট হয়ে এলেও চাহিদা বেড়েছে অনেক খাতে। এর মধ্যে একটি তথ্যপ্রযুক্তি খাত। অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান থাকলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা আরো জোড়ালো হয়। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের জন্য বৃত্তিসহ তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বাংলাদেশ ইসলামিক সলিডারিটি এডুকেশনাল ওয়াক্ফ (আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ)।
প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের এক বছর মেয়াদি আইটি স্কলারশিপ ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আবেদন করা যাবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই কোর্সে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আবেদনকারীকে কোনো টাকা দিতে হবে না। প্রশিক্ষণের খরচ ও বইও মিলবে ফ্রিতে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকে তারা।
আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর জাহিদ আল মেহেদী বলেন, এই আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামে বছরে চারবার শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তবে যোগ্য প্রার্থী পেলে প্রায় ৪০০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এভাবে বছরে চারবার মোট ১২০০-১৬০০ শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বৃত্তি
বাংলাদেশ সরকার ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে যাত্রা শুরু আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউর। তাদের একটি শিক্ষা প্রকল্প আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ আইটি বৃত্তি প্রকল্প। ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশের মুসলিম শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে তারা।
আবেদনে যোগ্য যারা
স্নাতক, ফাজিল, মাস্টার্স ও কামিল পাস প্রার্থীরা এবং এক বা দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স বা কামিলে পড়ুয়ারা আবেদন করতে পারবেন। কম্পিউটার, টেলিকমিউনিকেশন, ইলেকট্রনিকস, সিভিল, আর্কিটেকচার, সার্ভে ও কন্সট্রাকশন বিষয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা আবেদন করতে পারবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ২.০০ থাকতে হবে। তবে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি ও কম্পিউটারে স্নাতক প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না। চাকরিজীবীদের আবেদনের সুযোগ নেই। প্রার্থীর বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর হতে হবে। কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা না থাকলেও আবেদন করা যাবে।
যেভাবে আবেদন করতে হয়
শুধু অনলাইনে আবেদন করা যাবে। অনলাইনে আবেদনের জন্য এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে (apply.idb-bisew.info)। আবেদনকারীকে বিকাশের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসারে আবেদন ফি ১০০ টাকা জমা দিতে হবে।
কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ
আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ আইটি বৃত্তি প্রকল্পে মোট ১০টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিষয়গুলো হলো ডেটাবেইস ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিকস, অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং, এন্টারপ্রাইজ সিস্টেমস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিজাইন জেইই, এন্টারপ্রাইজ সিস্টেমস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিজাইন সি#. নেট, নেটওয়ার্কিং টেকনোলজিস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট উইথ পিএইচপি অ্যান্ড ফ্রেমওয়ার্কস, আর্কিটেকচারাল অ্যান্ড সিভিল ক্যাড, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও গ্রাফিকস অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া।
জাহিদ আল মেহেদী বলেন, করোনার প্রকোপ বেশি না থাকলে সশরীর ক্লাস হবে। তবে যদি করোনা মহামারি আবার বেড়ে যায়, তাহলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হবে। ক্লাস সপ্তাহে ছয় দিন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেনিং সেন্টারগুলোয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আর্থিক সুবিধা
কোর্সে ভর্তির পর প্রশিক্ষাণার্থীর সব ধরনের খরচ—প্রশিক্ষণ ফি, বই ও পরীক্ষার ফি প্রতিষ্ঠান বহন করে। জনপ্রতি প্রশিক্ষণের খরচ প্রায় দুই লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠান বহন করে। অনলাইন ভেন্ডর সার্টিফিকেশন পরীক্ষার ফিও প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে।
ভর্তির প্রক্রিয়া
লিখিত পরীক্ষা হয় ১০০ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, গণিত ও ইংরেজির সাধারণ দক্ষতা যাচাই করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রার্থীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়ার আগ্রহ আছে কি না, সে বিষয়টি মৌখিক পরীক্ষায় দেখা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা ও চট্টগ্রাম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।
চাকরির সুবিধা
প্রশিক্ষণ শেষে কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউর প্লেসমেন্ট সেল সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। জাহিদ আল মেহেদী বলেন, আমাদের সঙ্গে দেশের প্রায় সব আইটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি রয়েছে। তাই প্রশিক্ষণ শেষে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। এখান থেকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরিহীন থাকার নজির নেই। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরে মাইক্রোসফট ও ওরাকলের মতো প্রতিষ্ঠানেও আমাদের অনেক শিক্ষার্থী সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন।