ই-গভার্নমেন্ট বাস্তবায়নের ফলে দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ৫২ হাজার ওয়েবসাইট, করোনাকালে মুক্তপাঠে ৭০ লাখ সাবস্ক্রিপশন, ডিজিটাল এডুকেশন প্লাটফর্ম, ১.৩ মিলিয়নের বেশি নির্ভর রফতানি আয়, ৩৩৩, ৯৯৯ বিডি পুলিশ, ভার্চুয়াল কোর্ট, ৪ কোটি ই-নথি ও ৮ হাজার দফরের ব্যবহারসহ করোনাকালে ই-অফিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্যবহারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিপরিষদ একনেক এর সভায় যোগদান ইত্যাদি সবই ই-গভার্নমেন্ট চালু থাকায় সম্ভব হয়েছে।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও অক্টোবর মাসকে সাইবার অ্যাওয়ারনেস মাস হিসেবে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটিজ (সিসিএ) এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র উদ্যোগে ‘টেকসই উন্নয়নে সাইবার নিরাপত্তা’ বিষয়ক একটি অনলাইন সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক মো. খায়রুল আমীনের সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিসিএ-এর নিয়ন্ত্রক আবু সাঈদ চৌধুরী। এই আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মামুন অর রশীদ। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাদেশ পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ এবং এটুআই এর চিফ টেকনোলজি অফিসার আরফে এলাহী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে সাড়ে ৪ কোটি মানুষের ভ্যাকসিন নিবন্ধন, আড়াই কোটি ভ্যাকসিন প্রদান, বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম ডেটা সেন্টার স্থাপনের নজির এবং সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল বিপ্লবের এ সব ম্লান করে দিতে পারে আমাদের সাইবার নিরাপত্তার ব্যর্থতা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ৮১ বিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে এ সময়ে কোন দেশে ফিজিকাল অ্যাটাকের দরকার হয় না। সাইবার অ্যাটাক এর মাধ্যমে একটি দেশকে অকার্যকর করে দেওয়া যায়। ২০০৭ এ এসতোনিয়া, ইউকে, ইরান এর সাইবার হামলার ঘটনা তিনি উল্লেখ করে এ বিষয়ে আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানান।
ওয়েবিনারে তিনি আরও বলেন, আমাদের জানা-অজানায় আমরা ১৪ ধরনের সাইবার হামলার শিকার হই। স্প্যাম, র্যানসামওয়্যার, ফিসিং, মেলওয়্যার, ইনফরমেশন লিকেজ, ইনসাইডার থ্রেট বটনেটস্ এর অন্যতম। সাইবার নিরাপত্তায় আইসিটি বিভাগের প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন, অত্যাধুনিক ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান ও করণীয় নির্ধারণ কাজ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি কর্তৃক ৪৫৫০টি সাইবার হামলার ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে ২৭৮টির বেশি ছিল আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট। সরকারি দফতরের পাশাপাশি আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা সমূহের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও সিআইআরটি দেখছে। গ্লোবাল সাইবার ইন্ডেক্স -এ আমাদের অবস্থান ১৬০টি দেশের মধ্যে ৪১তম বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ক্যাপাসিটি মডেল, ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার, সাইবার লিটারেট সোসাইটি এবং সাইবার ইকো-সিস্টেম গঠনের মধ্যে দিয়ে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন, দক্ষ জনবলসহ কাঠামোগত সক্ষমতা অর্জন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা মিডিয়ার যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সাইবার অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার জন্য তিনি সবার আগে ব্যক্তি পর্যায়ের সচেতনতা তৈরির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে, ব্যক্তির পাশাপাশি আমাদের সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবার সাথে সাথে এর সবোর্চ্চ সুফল ভোগ করতে হলে সাইবার সুরক্ষার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন।