তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রতি বছর বিশেষভাবে আয়োজন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড’। এটির যাত্রা শুরু হংকং থেকে। প্রতি বছর এটি হংকংয়ই আয়োজন করে থাকে। তবে এবারই প্রথমবারের মতো হংকংয়ের বাইরে বাংলাদেশে এ অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে বিশেষ আয়োজন করা হচ্ছে।
আগামী শুক্রবার (৮ অক্টোবর) থেকে ঢাকায় এ অলিম্পিয়াড শুরু হচ্ছে, চলবে আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। এতে ১২টি দেশের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের ৫০টি টিম অংশ নিচ্ছে। অলিম্পিয়াডের পাশাপাশি চারটি সেমিনারের আয়োজনও করা হয়েছে।
বুধবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটেরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ফল বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ ভোগ করতে পারছে। বিগত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে আইসিটি খাতে চারটি পিলার শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে ইউনিয়ন পর্যন্ত ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি পৌঁছে গেছে। প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে, যারা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করছে। সারাদেশে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, ও বিপিও সেক্টরে ১৫ লাখ তরুণ-তরুণীরা কাজ করে আইসিটি শিল্পের অবদান রাখছে।’
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে চান। এর জন্য আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ব্লকচেইন হতে পারে বাংলাদেশের বিনিয়োগের অন্যতম প্রযুক্তিখাত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্লকচেইনকে উৎসাহিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ব্লকচেইনকে তাদের কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ব্লকচেইনের মত একটি ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তি সম্পর্কে যাতে এ দেশের কিশোর-কিশোরীরাও জানতে পারে, সেই জন্য আরও পাঁচ সহস্রাধিক শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ১০ হাজার পরিকল্পনা আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিসিসির নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুল মান্নান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড-২০২১ এর চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ এন করিম। এসময় অনলাইনে সংযুক্ত হন হংকং ব্লকচেইন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স মা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অনুপ্রেরণামূলক ক্ষমতায়ন এবং উদ্ভাবন’। এটি একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশ পর্বে ‘ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-২০২১’ এর বিজয়ী ১২টি দল এ আয়োজনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা এ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে। বিজয়ীদের জন্য মোট ৪০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ এ ইভেন্টে বিচারক এবং বক্তা হিসাবে সংযুক্ত হবেন।
বৈশ্বিক এ প্রতিযোগিতায় মোট ১২টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। সেগুলো হলো- চীন, হংকং, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ড, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, শ্রীলঙ্কা। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে মোট ৫০টিরও বেশি দল অংশগ্রহণ করছে। ইভেন্টটিতে যোগ দিতে ভিজিট করুন: ibcol2021.com।
এদিকে, এ অলিম্পিয়াড উপলক্ষে চারটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারগুলো হবে সিবিডিসি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি, ই-গভর্নেন্স, আইডেন্টিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি এবং ফিনটেক বিষয়ে। অনুষ্ঠানসহ সেমিনারগুলো আইবিওএল-এর ওয়েবাইসাইটে ibcol2021.com অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলসহ ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ এবং টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে। এ আয়োজনে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে এফবিসিসিআই, বেসিস, আইবিএ, এসিআই লিমিটেড, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউথ পলিসি ফোরাম ও একাত্তর টিভি।