মহামারীর ধাক্কায় সাশ্রয়ী ল্যাপটপ সিপিইউ বিক্রি লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। মার্কারি রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কম্পিউটারের এ হার্ডওয়্যার বিক্রি অভূতপূর্ব হ্রাস পেয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সাশ্রয়ী ল্যাপটপের সিপিইউ বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ইউনিট। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফ্রাইডে কিংবা সাইবার মানডের মতো শপিং উৎসবে গ্রাহকদের জন্য আশাবাদের জায়গা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। খবর টেক টাইমস।
পিসি ম্যাগ প্রকাশিত গতকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, কম দামের ল্যাপটপের জন্য জরুরি সিপিইউর চাহিদা অনেক কমে এসেছে। বিশেষ করে এএমডি অ্যাথলন ও ইন্টেল সেলেরন।
ব্যক্তিগত কম্পিউটারের (পিসি) প্রসেসর বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান মার্কারি রিসার্চ বলছে, দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকেই শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে এবং তখন সিপিইউ বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বিক্রিতে এটা সবচেয়ে বাজে প্রান্তিকের রেকর্ড গড়েছে বলে মনে করেন মার্কারি রিসার্চের প্রেসিডেন্ট ডিন ম্যাকক্যারন।
পিসি ম্যাগকে দেয়া এক ই-মেইল সাক্ষাত্কারে ম্যাককরন বলেন, চলমান সেমিকন্ডাক্টর সংকটের সঙ্গে সাশ্রয়ী ল্যাপটপের সিপিইউর চাহিদায় পতনের কোনো সম্পর্ক নেই। গুগল ক্রোমবুকের মতো বেসিক লেভেলের ল্যাপটপের চাহিদা বৃদ্ধি এতে ভূমিকা রাখতে পারে।
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত বছর ঘরে থেকে কাজ ও ক্লাসের কারণে ল্যাপটপের চাহিদা বেড়েছিল। ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিক থেকে ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক নাগাদ ল্যাপটপের বিক্রিতে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৮০ শতাংশ। এখনো বিশ্বের কিছু অংশে তা চালু থাকলেও পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় ল্যাপটপের চাহিদা কিঞ্চিৎ কমেছে।
তবে বাজারে চাহিদা কম থাকলেও সিপিইউর দাম বাড়বে বলে পূর্বাভাস মার্কারি রিসার্চের। বর্তমানে যেখানে সিপিইউর গড় বিক্রয় মূল্য ১৫১ ডলার, তা শিগগিরই ১৬৮ ডলারে দাঁড়াতে পারে।
সিএনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে কোয়ালকমের সিইও ক্রিশ্চিয়ানো অ্যামন জানান, চলতি বছর শেষের আগেই সরবরাহ সংকট প্রশমিত হবে। ২০২২ সালের শেষার্ধে চাহিদামাফিক চিপ সরবরাহ করার আশাবাদ কোয়ালকমের। ইন্টেল যেখানে ২০২৩ সালের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পূর্বাভাস দিয়েছে। এএমডির পূর্বাভাস ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধের আগে চিপ সংকট স্বাভাবিক হচ্ছে না।
এদিকে টেক রাডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চিপ স্বল্পতায় ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে আশানুরূপ বিক্রি দেখছে না ল্যাপটপ পিসি বিক্রেতারা। সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনকারী প্রতিষ্ঠান আর্মের সিইও সিমন সেগার্সের সতর্কবাণী, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, সাইবার মানডে ও ছুটির মৌসুমটাতে শপারদের জন্য হতাশা নিয়ে আসতে পারে চিপ স্বল্পতা। আগামী বছরের ক্রিসমাসের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা দেখছেন না সেগার্স।
বিদ্যমান ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা নতুন প্ল্যান্ট নির্মাণে চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো শতকোটি ডলার ব্যয় করছে বলে জানান আর্ম সিইও। কিন্তু যতই অর্থ বিনিয়োগ করা হোক না কেন সময়সীমা এগিয়ে আনার কোনো সুযোগ দেখছেন না তিনি।
বিপর্যয়ের মধ্যে ব্যতিক্রম চীনা পিসি বিক্রেতা জায়ান্ট লেনোভো। চিপ স্বল্পতা সত্ত্বেও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে তারা, যা আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি।