‘শিশুদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদানের চেয়ে ভাল কর্মসূচি আর হতে পারে না। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও মোটেও তা কঠিন বা দুঃসাধ্য নয়।আমরা আমাদের দায়িত্ব থেকেই এই চ্যালেঞ্জটি নিয়েছি,’ বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এই কর্মসূচির সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে কর্মসূচিটিকে একটি ভিশনারি কাজ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা একদিন শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ও প্রচলিত প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের ঐতিহাসিক স্বাক্ষী হয়ে থাকবেন।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালকরণ প্রকল্পের প্রশিক্ষকগণের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান।
টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক মো: আবদুল ওয়াহাব এবং বিজয় ডিজিটাল-এর প্রধান নির্বাহি জেসমিন জুই বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন,‘ শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য দীর্ঘ তিন যুগ ব্যাপী কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৯৯ সালে গাজীপুরে ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু করি যা এখন সারা দেশে বিস্তৃত হয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারে মন্ত্রী তার দীর্ঘ পথ চলার চ্যালেঞ্জ সমূহ তুলে ধরে বলেন, ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারের সবচেয়ে বড় দুটি প্রতিবন্ধকতা হলো ডিভাইস এবং কনটেন্ট। গত ১২ বছরে বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহি জেসমিন জুই কনটেন্ট বিষয়ক চ্যালেঞ্জটি তার ২০জন দক্ষ সহযোদ্ধাকে নিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে মোকাবেলা করতে পেরেছেন। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্য পুস্তকের কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের হাতে তিনি তুলে দিতে পেরেছেন। বিনা টাকায় করোনাকালে শিক্ষার্থীদেরকে এই কনটেন্টটি দেওয়া হয়।
কম্পিউটারে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষা জীবনে প্রাথমিক স্তরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আগামী দিনটা হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির দিন। এই পদ্ধতিতে শিশুদের কম্পিউটার শিক্ষার কাজটিও যেমন এগিয়ে যাচ্ছে পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহও তেমনি বাড়ছে। প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি বিদ্যমান শিল্পযুগের উপযোগী মানব সম্পদ তৈরি করতে পারবে না। ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতিই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকার একমাত্র পথ। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত ১৩ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির পথ বেয়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলাদেশ নেতৃত্বের জায়গায় উপনীত হয়েছে।ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী শিশু বয়সকে সৃজনশীলতা ও মেধা অর্জনের সঠিক সময় উল্লেখ করে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বইয়ের পরিবর্তে একদিন ট্যাব বা ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছে যাবে এবং সেদিন খুবই কাছে।
টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কামরুজ্জামান ডিজিটাল শিক্ষা প্রসারে ৬৫০টি প্রাথমিক স্কুল নিয়ে যে অভিযাত্রাটি শুরু হয়েছে তা অভাবনীয় সুফল বয়ে আনবে।
জেসমিন জুই বলেন, এই পদ্ধতিতে শিশুরা খেলার ছলে আনন্দের সাথে তাদের পাঠ্যক্রম সহজে আয়ত্ব করতে সক্ষম। তিনি দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রশিক্ষকদেরকে ডিজিটাল উপাত্ত ব্যবহার করার কৌশলাদি শেখান।
এ প্রকল্পের আওতায় ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমসমূহ ডিজিটাল হবে। তাদের ক্লাসে ডিজিটাল টিভি, ল্যাপটপ ও ট্যাব থাকবে। স্কুলে থাকবে ইন্টারনেট সংযোগ। বেসরকারিভাবে ২০০০ ও ২০১৫ সালে এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা দেশে চালু হলেও সরকারিভাবে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে পাঠ্য বিষয়ের সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন করে ডিজিটাল যন্ত্রের সহায়তায় শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন এই প্রথম।