সভারেন হোস্টেড ক্লাউড সেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাসট্রাকচার ডেডিকেটেড রিজিওন ক্লাউড অ্যাট কাস্টমার নির্বাচন করেছে। বিডিসিসিএল ও আইসিটি বিভাগের এ উদ্যোগের ফলে সরকারি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলোতে নিরাপদ ক্লাউড পরিষেবা সরবরাহের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন আরো ত্বরান্বিত হবে।
মূলত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ সরকারকে সোভারেন-হোস্টেড ক্লাউড পরিষেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল) সরকারের ডাটা স্টোরেজ এবং ডিজাস্টার রিকভারি সার্ভিস প্রভাইডার ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেডিকেটেড রিজিওনাল ক্লাউড অ্যাট কাস্টমারকে বেছে নিয়েছে।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এর উদ্দেশ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং মন্ত্রণালয়গুলোতে নিরাপদ, সোভারেন-হোস্টেড, এন্টারপ্রাইজ-ক্লাস ক্লাউড এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে একটি ‘জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতিতে’ পরিণত করার প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করা।
সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর রূপকল্পের উদ্দেশ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা, যেখানে সবার জন্য কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হবে। এটি অর্জনে সরকার সার্বভৌম-হোস্টেড ক্লাউড পরিষেবাগুলোর উপযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিভিন্ন ক্রিটিক্যাল সিস্টেম, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা, ই-গভর্নেন্স, ই-ফাইলিং, স্বাস্থ্য, মানব সেবাসহ অন্যান্য বিভাগ এবং বাংলাদেশের সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি সংস্থার কাজে সহযোগিতা করবে ক্লাউড পরিষেবা।
ডেডিকেটেড রিজিওনাল ক্লাউড অ্যাট কাস্টমার বিডিসিসিএলকে ক্লাউড অবকাঠামোতে তার সম্পূর্ণ আইটি পোর্টফোলিও চালাতে সক্ষম করবে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ডাটার ওপর ফিজিক্যাল নিয়ন্ত্রণ থাকবে, যাতে সরকারি ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন ডাটা সোভারেনটি পায়।
এছাড়া যেকোনো অন প্রিমিসেস প্লাটফর্মের তুলনায় ওরাকল ডেডিকেটেড রিজিওনাল ক্লাউড ব্যবহারকারীদের দ্রুত দক্ষতার সঙ্গে এবং সাশ্রয়ীভাবে অনলাইনে নতুন অ্যাপ্লিকেশন ও পরিষেবা আনতে সক্ষম করে উল্লেযোগ্য হারে খরচ কমায়।
এ প্রসঙ্গে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ আমাদের দেশের অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ফোকাসড, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত এবং অত্যন্ত নিরাপদ সরকারি ক্লাউড ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
তিনি বলেন, ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেডিকেটেড রিজিওনাল ক্লাউডের মাধ্যমে পরিচালিত পরবর্তী প্রজন্মের, এন্টারপ্রাইজ-ক্লাস ক্লাউডের সাহায্যে আমরা ই-ভোটিং, ই-স্বাস্থ্য পরিষেবা, ই-ফাইলিং, ভার্চুয়াল আদালত, ই-জুডিশিয়ারি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যক্রমের আধুনিকীকরণকে ত্বরান্বিত করতে পারি। একই সঙ্গে আমরা সরকারি সংস্থাগুলোকে উল্লেখযোগ্য ব্যয় সংকোচন সুবিধা দিতে পারি, যাতে তারা দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে অনলাইনে শক্তিশালী, সুরক্ষিত নতুন অ্যাপ্লিকেশন এবং পরিষেবা আনতে সক্ষম হয়।’
আইসিটি ডিভিশনের সিনিয়র সেক্রেটারি এবং বিডিসিসিএল-এর চেয়ারম্যান এনএম জিয়াউল আলম পিএএ, বলেন, ‘ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেডিকেটেড রিজিওন ক্লাউড অ্যাট কাস্টমার সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য নিরাপদে তাদের ক্লাউড-এনাবল্ড ট্রান্সফর্মেশনকে পরবর্তী ধাপে যেতে সহযোগিতা করবে। উন্নত কর্মক্ষমতা, নিরাপত্তা, কম খরচ, সোভারেনটি-হোস্টেড ক্লাউড পরিষেবার জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে পাওয়ার, এনার্জি, ভূমিসংশ্লিষ্ট অনেক সরকারে সংস্থা ওরাকলের বিভিন্ন সেবা ব্যবহার করছে। একটি স্থানীয় ক্লাউড ব্যবস্থা থাকলে সহজে ক্লাউডে সংবেদনশীল ডাটা স্থানান্তর করা যায়।’
বিডিসিসিএল’এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেডিকেটেড রিজিওন ক্লাউড অ্যাট কাস্টমার সেবা নিয়ে বিডিসিসিএল আইসিটি বিভাগের সঙ্গে একযোগে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম আপটাইম ইনস্টিটিউট সার্টিফাইড টায়ার ফোর ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার নিয়ে এসেছে।
তিনবি আরও বলেন, আমরা এখন ৭৫টিরও বেশি আইএএএস, পিএএএস এবং এসএএএস’র পরিষেবা দিতে প্রস্তুত। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যকে ত্বরান্বিত ও সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে রূপকল্প বাস্তবায়নে এবং বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
ওরাকল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাবা দৌলা বলেন ‘সভারেইন হোস্টেড, এন্টারপ্রাইজ-ক্লাস ক্লাউড সক্ষমতার জন্য এর দেশীয় এবং আঞ্চলিক বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বৃহৎ আকারের প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রকল্পে, বিমানবন্দরগুলোকে ডিজিটালাইজ করা, স্মার্ট গ্রিড প্রকল্প শুরু করা এবং ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্পসমূহ শুরু করার জন্য শক্তিশালী বিনিয়োগ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আইসিটি বিভাগের অধীনে বিডিসিসিএলের সঙ্গে কাজ করতে এবং সরকারের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা কঠোর নিরাপত্তা, অবকাঠামো, কর্মক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে ক্লাউড উদ্ভাবনকে সরকারের কাছে আরও সহজলভ্য করে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেডিকেটেড রিজিওন ক্লাউড অ্যাট কাস্টমারকে ‘দ্য টায়ার ফোর ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার’-এ হোস্ট করা হবে। বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম এ সেন্টারটি কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে অবস্থিত। এটি বিডিসিসিএলকে ওরাকলের বেয়ার মেটাল কম্পিউট, ভিএমএস এবং জিপিইউএস, ওরাকল অটোনোমাস ডাটাবেস এবং ওরাকল এক্সাডাটা ক্লাউড পরিষেবাসহ সব ধরনের সেবার অ্যাক্সেস দেবে।
ক্লাউড রিজিওন সব ধরনের কাস্টমার কন্টেন্টে এবং মূল বিষয়বস্তুর মেটাডেটা সহ ডাটার শক্তিশালী আইসোলেশন প্রদান করে, যা সরকারের ডেটা সেন্টারের মধ্যে থাকে এবং সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা দেয়।