২০১৯-এর ডিসেম্বরে কভিড-১৯ মহামারী আঘাত হানে। তখন থেকেই প্রযুক্তিবাজারে সরবরাহ সংকট বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় চিপ সংকট। প্রযুক্তিবিদরা আশার বাণী শোনালেও দ্রুতই যে এ সংকট কাটছে না সেটি দৃশ্যমান। খবর এনগ্যাজেট।
২০২০ সালজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চিপ সংকট। বিশেষ করে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকস ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের রিমোট ওয়ার্ক ও শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য স্কুল ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে কম্পিউটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। কিন্তু তার পরও নির্ধারিত সময়ে ডিভাইস বাজারে আনতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান।
পারতপক্ষে চিপ সংকট সামগ্রিকভাবে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করলেও গেমাররা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। এক বছর আগে বাজারে প্লেস্টেশন ৫ উন্মুক্ত করেছিল সনি। বর্তমানে গ্রাহকদের জন্য দ্বিতীয় আরেকটি ডিভাইস সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কম্পিউটার গেমাররা তাদের গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) পরিবর্তন করতে চাইলেও সরবরাহ সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এনগ্যাজেটকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ফরেস্টারের গবেষক গ্লেন ও ডনেল বলেন, বর্তমান সমস্যাটি মূলত সাধারণ চাহিদা ও জোগানস্বল্পতার। এর জন্য বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করা যায় বলেও জানান তিনি। গ্রাহকরা নতুন গাড়ি কিনবেন না এমন সম্ভাবনায় কভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুতে উৎপাদনকারীরা যন্ত্রাংশের চাহিদা কমিয়ে দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহূত গাড়ির মূল্য অধিক হারে বেড়ে যায়।
কভিড-১৯-এর সংক্রমণজনিত লকডাউন ও অন্য বিধিনিষেধের মধ্যে চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কম্পিউটার, গ্যাজেট ও গেম কনসোলের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে তাদের কার্যক্রম চালু রাখতে বাধ্য হয়। এ বিষয়ে ও ডনেল বলেন, অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে আমি মনে করি। সেসঙ্গে অবনতিও হয়েছে। তবে আমি এতে বিচলিত নই।
গত এপ্রিলে তিনি বলেছিলেন, ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চিপ সংকট থাকবে। বর্তমানে তিনি আরো নিশ্চিত যে, ওই সময়েও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। ইন্টেল, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) ও স্যামসাং তাদের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও কারখানা স্থাপন শেষে পরিপূর্ণ উৎপাদনে যেতে অন্তত আরো দুই বছর সময় লাগবে। সেপ্টেম্বরে ইন্টেল অ্যারিজোনায় নতুন দুটি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করলেও ২০২৪ সালের আগে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন শুরু করা যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনভিডিয়ার সিইও জেনশেন হুয়াং জানান, সরবরাহ সংকট নিরসনে কোনো ম্যাজিক বুলেট নেই। এনভিডিয়ার নিজস্ব সরবরাহকারীরা একাধিক উৎসনির্ভর হলেও কভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি গেমারদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেয়েছিল। স্কালপার ও ক্রিপ্টোমাইনাররা প্রসেসর ও গ্রাফিকসের অধিকাংশ স্টক কিনে নেয়ায় সাধারণ গ্রাহকরা নতুন পণ্য পাচ্ছেন না। ২০২৩ সাল নাগাদ উৎপাদন বাড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করলেও হুয়াংয়ের বিশ্বাস, কভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে কম্পিউটার ও গেমিং হার্ডওয়্যারের চাহিদা ও ক্রয়ের হার চলমান থাকবে।
ইয়াহুকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, আমি মনে করি হোম অফিস, লার্নিং ফ্রম হোম পরিস্থিতিগুলো চিরস্থায়ী।