দেশের তিনটি আইটি পার্কে ২১টি প্রতিষ্ঠানকে জমি ও স্পেস বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এই বরাদ্দের কারণে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও দুই হাজার ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে চারটি, চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৬টি এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে একটি প্রতিষ্ঠানকে জমি-স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ভবনের হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জমি-স্পেস হস্তান্তরের লক্ষ্যে চুক্তি সই হয়।
চুক্তিতে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানির প্রধানরা স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ।
বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে বাংলাদেশ কার্ড লিমিটেড ৪ নম্বর ব্লকে ৭ একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে স্মার্ট কার্ড, বিশেষ নিরাপত্তা পণ্য, এটিএম মেশিন উৎপাদন ও এসেম্বল করার লক্ষ্যে প্রায় ৮৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এর ফলে কোম্পানিটিতে আনুমানিক ৬৫০ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এশিয়া কম্পিউটার বাজার লিমিটেডের অনুকূলে ৬ নম্বর ব্লকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ একর জমি, সেখানে তারা কম্পিউটার, স্মার্ট টিভি, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, সিকুরিটি সার্ভেইল্যান্স এবং স্পিকার এসেম্বল ও উৎপাদন করবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ৬০০ জন।
সেলট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড ৪ নম্বর ব্লকে বরাদ্দ পেয়েছে ০.৫ একর জমি যেখানে তারা রেডিও সেট এবং এফএম ট্রান্সসিভার উৎপাদন ও এসেম্বল করবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ২৫ কোটি টাকা এবং প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান ১৫০ জন।
এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে ৪ নম্বর ব্লকে ১৪.৩৩ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সেখানে তারা অফিস ভবন ও ডরমিটরি স্থাপন করবে।
অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে জেনেক্স, হ্যালো ওয়ার্ল্ড, এক্সসিড বাংলাদেশ লিমিটেড, ইঞ্জেনিয়াম কনসাল্টিং, এডব্লিউ কমিউনিকেশন, কাজী কমিউনিকেশনস, আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড, এক্সপোনেন্ট ইনফোসিস্টেম (প্রা.) লিমিটেড, ট্রাস্ট গ্লোবাল, ইমতিয়াজ এন্টারপ্রাইজ, রিয়েল আইটি, বাংলা পাজেল লিমিটেড, কোডার্স ল্যাব, প্লান-বি সলুশন, কে এ আর কমিউনিকেশন এবং সংযোগইউ ডটকম নামীয় প্রতিষ্ঠানকে রেডি স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই ১৬টি প্রতিষ্ঠান সেখানে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টসহ আইটির বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে হ্যামকো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আর অ্যান্ড ডি সেন্টারকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগকারীদের অর্থায়ন করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে পৃথক একটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতার আওতায় হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করবে ব্র্যাক ব্যাংক।
সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ১০টি হাই-টেক পার্ক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এরমধ্যে সম্প্রতি তিনটি পার্ক প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে উদ্বোধন করেছেন। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, চুক্তির মাধ্যমে তিনটি পার্কে যে ২১টি প্রতিষ্ঠান জমি ও স্পেস বরাদ্দ পেলো, তারা হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, আইওটি, বিপিও, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডাটা সেন্টার প্রভৃতি উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। এর ফলে পার্ক তিনটিতে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও দুই হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।