বিদায়ী বছরে আফ্রিকা মহাদেশে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় অংকের বিনিয়োগ এসেছে। বিভিন্ন প্রযুক্তিসংক্রান্ত স্টার্টআপই ছিল বৈদেশিক বিনিয়োগের আকর্ষণীয় কেন্দ্র। এ খাতে ২০২১ সালে ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে আফ্রিকা মহাদেশ। এটি পাঁচ বছর আগে যে বিনিয়োগ এসেছিল তার তুলনায় প্রায় নয় গুণ। প্রযুক্তি স্টার্টআপের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ খাত ছিল সম্ভাবনাময় ফিনটেক।
ব্রাইটার ব্রিজেস নামে একটি সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফিনটেক খাতে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে, যা দেশটির স্টার্টআপে আসা বৈদেশিক বিনিয়োগের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ২০২০ সালের ১৩৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের দ্বিগুণের বেশি এবং ২০১৯ সালের তুলনায় তা তিন গুণ। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, আফ্রিকার ফিনটেক খাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়া ফিনটেক কোম্পানি হচ্ছে ওপে, যারা ৪০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে। ফ্লাটারওয়েব ও টাইমব্যাংক যথাক্রমে পেয়েছে ১৭ কোটি ও ১৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ। এছাড়া এমএফএস আফ্রিকা, জেপজ, চিপার ক্যাশ, তালা ও ওয়েব ফিনটেক স্টার্টআপে বিনিয়োগ এসেছে যথাক্রমে ১০ কোটি, ২৯ কোটি ২০ লাখ, ২৫ কোটি, ১৪ কোটি ৫০ লাখ ও ২০ কোটি ডলার।
আফ্রিকায় সেলফোন ব্যবহার ও ইন্টারনেট সম্প্রসারণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফিনটেক খাতে বিনিয়োগ প্রতি বছর বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জিএসএম অ্যাসোসিয়েশনের পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে মোবাইল সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ৬১ কোটি ৫০ লাখে দাঁড়াবে। আফ্রিকার অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এর সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে ঋণ গ্রহণ, ডিজিটাল লেনদেন, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স সেবাও বাড়বে। এ কারণে আফ্রিকা মহাদেশের ফিনটেক স্টার্টআপগুলোর আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ভিসা, মাস্টারকার্ড ও স্ট্রাইপের মতো বৈশ্বিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ফ্লাটারওয়েব, চিপার, এমএফএস আফ্রিকা, সেলুল্যান্ট ও জুমুও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগামী কয়েক বছরে এ কোম্পানিগুলোর বিস্তার আরো বাড়বে এবং বিভিন্ন ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেনও বাড়বে।
বেশ কয়েক বছর ব্যাংকিং, ঋণদাতা স্টার্টআপ ও ইন্স্যুরেন্স স্টার্টআপে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আসার পর গত কয়েক বছরে ফিনটেকেই সর্বোচ্চ বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে।
ম্যাককিনসের গবেষণায় বলা হয়, লাতিন আমেরিকার পর দ্বিতীয় দ্রুত সম্প্রসারমাণ ও লাভজনক পেমেন্ট ও ব্যাংকিং বাজার আফ্রিকা। আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফিনটেক খাতে সামনের দিনগুলোয় আরো নতুন উৎস থেকে বিনিয়োগ আসাই স্বাভাবিক।
প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে মোবাইলে অর্থ লেনদেনে আফ্রিকা এখন বিশ্বনেতৃত্বের আসনে বলা যায়। ২০২০ সালে বিশ্বের সিংহভাগ মোবাইল মানি লেনদেন হয়েছে সেখানে। মহাদেশটিতে ওই বছরে মোবাইল মানি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।