বাংলাদেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি শুরু হয়েছে। সামনের ৫ বছরে বিশ্বের ৫০টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিজিটাল যন্ত্র রপ্তানি হবে, বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তি বান্ধব নীতির ফলে ২০১৮ সালের পর থেকে দেশিয় কারখানায় উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট এ পর্যন্ত দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৬৩ ভাগ পুরণ করছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী আজ সাভারের আশুলিয়ায় সিস্ফনী মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট উৎপাদন কারখানায়, কারখানা থেকে উৎপাদিত হ্যান্ডসেট নেপালে রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান, বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল যন্ত্র আমদানিকারক দেশ থেকে বাংলাদেশকে উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশে রূপান্তরের জন্য ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনাসহ যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়নের ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ ডিজিটাল ডিভাইস আমদানিকারী দেশ থেকে উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশে রূপান্তর লাভ করেছে বাংলাদেশ। গুণগত মানের সাথে কোন প্রকার আপস না করে বিশ্বের সেরা মানের মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং তূলনামুলক সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় মেড ইন বাংলাদেশ মোবাইল হ্যান্ডসেট সহসাই বড় একটি জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে বলে মন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল প্রযুক্তি জগতে তার দীর্ঘ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে তরুণ জনগোষ্ঠী।
তিনি এ প্রজন্মের ছেলে- মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে বলেন, মহাকাশ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন না করেও আমাদের ছেলে – মেয়েরা নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং দক্ষতার সাথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অনুরূপভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির উৎপাদন বিষয়ে লেখা পড়া না করেও দেশের ১৪টি মোবাইল কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার তরুণ –তরুণী দক্ষতার সাথে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মোবাইল কারখানাসমূহ উৎপাদন ইউনিটসমূহে দেখলে আন্দাজ করাই কঠিন হবে যে আমরা শিল্পোন্নত দেশ নই। সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। তিনি কারখানা গুলোতে মোবাইল হ্যান্ডসেটের পাশাপাশি ট্যাব, কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ উৎপাদনে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বলেন, মেড ইন বাংলাদেশ মোবাইল হ্যান্ডসেট বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়ার শিল্প বাংলাদেশের একটি শ্রমঘণ শিল্পে পরিণত হওয়া দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিটিআরসি মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনসহ এই শিল্পের বিকাশে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে।
মন্ত্রী, সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও তাদের সহযাত্রীরা কারখানার বিভিন্ন উৎপাদন ইউনিট ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা কারখানায় বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত কর্মীদের সাথে কথা বলেন। তিনি কারখানার উৎপাদন ইউনিট সমূহ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।