২০২১ সালের অক্টোবরে ফেসবুককে মেটা হিসেবে রিব্র্যান্ডিংয়ের ঘোষণা দেন মার্ক জাকারবার্গ। মেটাভার্সে যৌন সহিংসতার বিষয়টি ইতোমধ্যেই একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। মেটার ‘হরাইজন ভেন্যুস’-এর নতুন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পা রাখা মাত্রই ‘ভার্চুয়ালি গণধর্ষণের’ শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ৪৩ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নারী।
গত বছর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ভার্জ প্রতিবেদন করেছিল, একজন বেটা টেস্টার অভিযোগ তুলেছেন যে অপরিচিত কোনো ব্যক্তি তার অবতারের শরীরে হাত দিয়েছে।
জাগতিক বাস্তবতার সঙ্গে ঘটবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মেলবন্ধন, এমন প্রতিশ্রুতি দেখিয়েই বিশ্ববাসীকে ‘মেটাভার্স’ টার্মটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ। কিন্তু এবার সেই মেটাভার্সেই পার্থিব নারকীয়তার সম্মুখীন হয়েছেন এক নারী।
লন্ডনভিত্তিক নিনা জেইন প্যাটেল নামের ওই নারী একটি মিডিয়াম পোস্টে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সেখানে বলেন, যোগ দেওয়ার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যেই তার ভার্চুয়াল অবতারকে (avatar) মৌখিক ও শারীরিকভাবে যৌন নিগ্রহ করতে থাকে তিন থেকে চারটি পুরুষ অবতার। সেই সঙ্গে তুলতে থাকে ঘটনার ছবিও।
“যখন আমি পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকলাম, তারা আমার দিকে চিৎকার করল, ‘এমন ভান কোরো না যে তোমারও এটা ভালো লাগেনি,'” নিনা লেখেন।
গোটা ঘটনাটাকে পরাবাস্তব ও দুঃস্বপ্নের মতো বলে মনে করছেন তিনি। এত দ্রুত সবকিছু ঘটে গেছে যে, মেটাভার্সে কোন ধরনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ভাববারও ফুসরত মেলেনি তার। বরং ওই ভয়ঙ্কর ঘটনার বিভীষিকাই দীর্ঘ সময় ধরে তাড়া করে বেড়িয়েছে তাকে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিনা জানান, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে তিনি নিজের হেডফোনের তার পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলেছিলেন।
“নিয়মিত ইন্টারনেটেই যৌন হয়রানি কোনো মজা নয়। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিষয়টিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে ঘটনাটির তীব্রতা আরো বেড়েছে,” ওই টেস্টার লেখেন।
“আমাকে গত রাতে শুধু জাপটেই ধরা হয়নি, বরং সেখানে আরও অনেকেই ছিল যারা এমন আচরণকে সমর্থন করেছে। এতে করে প্লাজায় আমার নিজেকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে হচ্ছিল।”
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মেটার হরাইজনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভার্জকে বলেন, “ঘটনাটি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক।” পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, ওই বেটা টেস্টার কোনো সেফটি ফিচার যোগ করেননি, যাতে করে অন্য কারও তার সঙ্গে ইন্টারাকশনকে ব্লক করে দেওয়া যায়। সার্বিকভাবে ওই টেস্টার ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ ধরনের প্রতিক্রিয়া অবশ্য মনঃপুত হয়নি গার্ডিয়ানের কলামিস্ট আরওয়া মাহদাউয়ির। তিনি একে কিছুটা “ক্যাজুয়াল ভিকটিম ব্লেমিং” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
“এটা আসলে কোনো নারীকে বলার মতো যে আপনি যদি রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে না চান, তাহলে আপনার উচিত ঘরে বসে থাকা,” তিনি লেখেন। “এভাবেই সেকেলে আমলের নারীবিদ্বেষকে ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত করে রিপ্যাকেজ করা হয়েছে।”