ইন্টারনেট নিরাপদ করতে সবার সচেতনতাই মুখ্য বলে দাবি করেছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’ উপলক্ষে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেন টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক।
তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ৮ ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আসুন একটি সুন্দর ইন্টারনেট ব্যবস্থার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই’। এবারের দিবসে তরুণ ও শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেটের ওপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেটে হেনস্তার শিকার হওয়াদের প্রায় ৮৭ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ১৮ বছরের কম বয়সী ভুক্তভোগী প্রায় ৯ শতাংশ। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে হলেও আমাদেরকে এখন থেকেই নিরাপদ ইন্টারনেটের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
মুর্শিদুল হক বলেন, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১২ কোটি। বেশির ভাগ ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল লিটারেসি বা জ্ঞানের অভাবের কারণেই মূলত অনিরাপদ হয়ে উঠছে ইন্টারনেট। বিভিন্ন অপরাধীরা কখনো অজ্ঞতাবশত অন্যের ক্ষতিকর কনটেন্ট ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আবার কখনো ব্যবহারকারীরা না জেনেই নিজের ইন্টারনেট ব্যবহারকে অনিরাপদ করে তুলছেন। দিনদিন ইন্টারনেট যত সহজলভ্য হচ্ছে সেই সঙ্গে আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠছে এর ব্যবহার। হ্যাকিং, অপপ্রচার, ভুল তথ্য দেওয়া, এটিএম কার্ড হ্যাকিং, অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, বিভিন্ন উপায়ে অনলাইনে প্রতারণা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ অবস্থার উন্নতির জন্য প্রত্যেক স্টেক-হোল্ডার ও ব্যবহারকারী সবাইকেই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
টিক্যাব আহ্বায়ক বলেন, অনেক সময় আমরা কোন লিংকটি ফেক আর কোনটি রিয়েল, সেটা বুঝে না বুঝেই ক্লিক করে ফেলি। আবার ইমেইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইনবক্সে কোনো লিংক বা ফাইল আসলে সেটা কে পাঠালো বা স্প্যাম কি না, বুঝে না বুঝে সেটা ওপেন করি, বিভিন্ন আনট্রাস্টেড সাইট থেকে গেম, মুভি, সফটওয়্যার ডাউনলোড করি, এগুলোর সঙ্গেই ডাউনলোড হয়ে যায় বিভিন্ন ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার। ফলে নিজেদের অজান্তেই আমাদের ব্যবহৃত ইন্টারনেট অনিরাপদ হয়ে যায়। কী করতে হবে আর কী করতে হবে না এ সংক্রান্ত ডিজিটাল লিটারেসি না থাকার কারণে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যায়, আমরা ভুক্তভোগী হই। এজন্য আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। যে কোনো জায়গা থেকে একটা চটকদার বিজ্ঞাপন বা হেডলাইন এলে তাতে ক্লিক করা যাবে না। আননোন সোর্স থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করা যাবে না। ফ্রি ইন্টারনেট পেলেই পাবলিক ওয়াইফাই বা যে কোনো জায়গায় লগইন বা ব্রাউজ করা যাবে না। খুব কমন পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না, নিজের পাসওয়ার্ড অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে।
মুর্শিদুল হক বলেন, ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে জনগণের পাশাপাশি সরকারের বিশেষ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনেক কিছু করার আছে। অনিরাপদ ইন্টারনেটের ঝুঁকি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে বেশি বেশি জানাতে হবে, সচেতনতামূলক নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে সরকার ও জনগণ উভয়ের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।