পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান ও পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড ‘নগদ’ এর নামে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, সাগরকান্দি ইউনিয়নের পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে প্রায় ৩ কেটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান নূর হোসেন বকুল। তারা গ্রাহকদের পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নগদ (রেজিঃ নং-সি-৫৩৬৭৭ (৩৪২) ২০০৪) এর নামে গ্রাহকদের টোকেন দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: ভাতার টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে
নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি, এজন্য সরকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেবার জন্য পোস্ট অফিসের পাশাপাশি একটি সংস্থা চালু করেছেন ‘নগদ’— এমন ভুলভাল বুঝিয়ে সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ যোগসাজশে বহু নারী-পুরুষের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী আলেয়া খাতুন, বুলু খাতুন, খালেক ফকির, সুফিয়া খাতুন, হুলুফা খাতুন, মানিক মোল্লাসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘এক লাখে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে লাভ দেয়ার কথা বলে টাকা জমা নেয়। আমাদের একেকজনের কাছ থেকে ২ লাখ, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ৮ লাখ করে টাকা নিয়েছেন। পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাদের বলে নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি হবে। তিনি আমাদের নগদের টোকেনও দিয়েছেন। আমরা কিছুদিন পরে পোস্ট অফিসে টাকা তুলতে গেলে মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আমাদের সঙ্গে শুরু করেন নানা তালবাহানা। টাকা না দিয়ে একের পর এক ঘুরাতে থাকে।’
তারা আরও বলেন, ‘তখন আমরা বিষয়টি স্থানীয় সাগরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরীকে জানালে তিনি পোস্টম্যানকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন এবং বুঝতে পারেন— তারা গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’
আরো পড়ুন: ভাতার টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে
এ বিষয়ে সাগরকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী বলেন, নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি— এমন লোভ দেখিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেলে ঘটনার একদিন পরে পাবনা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সাতবাড়িয়া পোস্ট অফিসে এবং সাতবাড়িয়ার পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলামকে সাগরকান্দি পোস্ট অফিসে বদলি করেন।
এ বিষয়ে নতুন পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পোস্টম্যান নূর হোসেন কোথায় আছে জানি না।’ গ্রাহকের বই হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সব বই ডাক বিভাগের না। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বকুলের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরীর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। গ্রাহকদের সব টাকা তারা পরিশোধ করে দেবেন।
আরো পড়ুন: ‘নগদ’ থেকে ভাতা ও উপবৃত্তির টাকা উধাও, বিপাকে লক্ষাধিক গ্রাহক
অপরজন পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সঙ্গে কথা বললে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে সুজাানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, তিনি বিষয়টি কয়েকজন ভুক্তভুগীর মাধ্যমে জেনেছেন। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
পাবনার ডেপুটি পোস্ট মাস্টার আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের একজন পোস্টম্যান লাখে এক হাজার টাকা লাভ দেবার কথা বলে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ এর মতো করে বই তৈরি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। পোস্ট অফিসের সঙ্গে কুরিয়ারের এ ধরনের সম্পর্ক নেই। বইতে নগদের লোগো দিয়েছে। মূলত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
ডেপুটি পোস্ট মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ঘটনায় এখনও ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি।