পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক অর্থাৎ ৫জি (5G) রোলআউটের আশায় দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিটি ভারতবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন। সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই বছরের শেষের দিকেই মানুষের কাছে ধরা দিতে পারে তাদের দীর্ঘদিনের দেখা স্বপ্ন – যা আপামর ভারতবাসীর মনে এক আশার আলো জাগিয়েছে। তবে এখনও ৫জি নেটওয়ার্কের দেখা না মিললেও বহুদিন আগেই মার্কেটে পা রেখেছে ৫জি স্মার্টফোন, এবং মানুষের মধ্যেও এই হ্যান্ডসেটগুলি কেনার আগ্রহ দিন-কে-দিন প্রবলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সাম্প্রতিককালে পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক রোলআউটের গুঞ্জনও যখন আকাশে-বাতাসে চতুর্দিকে মুখরিত হচ্ছে, তখন এই আগ্রহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক।
৫জি স্মার্টফোনই এখন ভারতের স্মার্টফোন বাজারে চলতি ট্রেন্ড। মিড-রেঞ্জ বা প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির স্মার্টফোন যারা কিনতে চাইছেন, তাদের কাছে ৫জি ডিভাইসই এখন প্রথম পছন্দের। এমনকি বাজেট ফোন ব্যবহারকারীরাও এখন ৫জি স্মার্টফোন কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এবং ইউজারদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রতিনিয়তই একাধিক ব্র্যান্ড নিত্যনতুন ৫জি ফোন লঞ্চ করছে। আপনিও কি একটি ভালো ৫জি স্মার্টফোন কেনার প্ল্যান করছেন? তাহলে এক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয়টি হল, স্মার্টফোনটি যে সত্যিই একটি ভালো ৫জি স্মার্টফোন, তা কীভাবে বুঝবেন? সেই কথাই আমরা আপনাদেরকে এই প্রতিবেদনে জানাতে চলেছি।
আপনি একটি ভালো 5G ফোন কিনছেন কি না তা কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
কাজটা কিন্তু খুব একটা কঠিন নয়। আপনি যে যে বিষয়গুলির কথা মাথায় রেখে একটি ভালো ৪জি ফোনের খোঁজ করেন, ঠিক সেই বিষয়গুলিই ৫জি স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রেও মাথায় রাখতে হবে। তবে ৫জি ফোন কেনার ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হল, ফোনটিতে কোন কোন ৫জি স্পেক্ট্রাম ব্যান্ড সাপোর্ট করে। কারণ এখনকার দিনে মার্কেটে উপলব্ধ এমন অনেক স্মার্টফোনই আছে যেগুলি ৫জি সাপোর্ট করবে বলে কোম্পানির তরফ থেকে দাবি করা হলেও তাতে কিন্তু আদৌ ৫জি সাপোর্টেড স্পেক্ট্রাম ব্যান্ড নেই। তাই এই বিষয়টিকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এবং চিপসেটের কথাও কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু! হ্যান্ডসেটগুলিতে ৫জি মডেম সহ চিপসেট আছে কি না তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে।
এরপর আপনার বাজেটটি নিশ্চিত করুন। কারণ কথাতেই আছে – যত গুড় ঢালা হবে তত মিষ্টি হবে। তাই ফোনের যাবতীয় গুণাগুণ বিবেচনা করে কোন রেঞ্জের স্মার্টফোন কিনতে চাইছেন, সেই বিষয়টি আগে নির্ধারণ করুন। তবে ৫জি স্মার্টফোনে যেহেতু ৫জি সাপোর্টেড স্পেক্ট্রাম ব্যান্ডগুলিই মূল বিবেচ্য বিষয়, তাই খুব সস্তা ডিভাইস খোঁজা কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে ফোনটি কেনার আগে ওয়েবসাইটে কিংবা লোকাল কোনো স্টোরে গিয়ে সেটির সম্পর্কে বিশদে জেনে নিন।
কোনো ফোনের অভ্যন্তরীণ গুণাগুণের পাশাপাশি সেটি ব্যবহার করে আপনি কতটা আনন্দ পাচ্ছেন, সেটাও কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়। যে কারণে ফোনের ডিসপ্লেটি ভালো কি না, সেটি দেখে নেওয়াও একান্ত আবশ্যক। বর্তমানে যে-কোনো স্ট্যান্ডার্ড ফোনেই ৯০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড ডিসপ্লে দেওয়া হয়।
এছাড়া, ফোনে পর্যাপ্ত র্যাম এবং স্টোরেজ স্পেস আছে কি না, তা যে অবশ্যই দেখতে হবে সেকথা নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ফোনটিকে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহার করার জন্য এগুলি চেক করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এখন বেশিরভাগ মানুষই ইয়ারফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও ফোনের স্পিকার বেশ জোরালো কি না, সেটিও কিন্তু দেখে নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি স্মার্টফোন যেহেতু অবসর সময়ে বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সেই কারণে ফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি এবং সাউন্ড লেভেলও চেক করে নিতে হবে।
সেইসাথে এখন স্মার্টফোনে ভালো ক্যামেরা রয়েছে কি না, সেদিকেও অনেকেই বেশ জোর দেন। তাই আপনি যদি ভালো ক্যামেরাযুক্ত একটি ৫জি স্মার্টফোন কেনার প্ল্যান করে থাকেন, তবে ফোনের ক্যামেরা কোয়ালিটিও বিশদে বিবেচনা করে দেখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, ফোনটি কতদিনের জন্য অ্যান্ড্রয়েড এবং সিকিউরিটি আপডেট পাবে তা কিন্তু অবশ্যই দেখে নিতে হবে। মূলত ফোনে দু-বছরের জন্য অ্যান্ড্রয়েড আপডেট এবং তিন বছরের জন্য সিকিউরিটি আপডেট দেওয়া হয়। আর সবশেষে বলে রাখি, ফোনের প্রসেসর সহ অন্যান্য যাবতীয় অভ্যন্তরীণ উপাদানের পাশাপাশি ফোনের মূল চালিকাশক্তি হল ব্যাটারি, তাই সেটি ভালো হওয়া নিতান্তই জরুরি। তাই ৫জি স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে সেটিতে পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য শক্তিশালী ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে কি না, তা অতি অবশ্যই দেখে নিন। দাম দিয়ে ৫জি ফোন কিনে সেটিকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে চাইলে এই সমস্ত জিনিসগুলি চেক করে নিতে ভুলবেন না কিন্তু!