বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস আজ। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেন যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২০২১ সাল। ডিজিটাল বাংলাদেশের মূলমন্ত্র ছিল চারটি, যথা: মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, ই-গভর্নেন্স ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প খাত গড়ে তোলা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে টুজি, ২০১৩ সালে থ্রিজি, ২০১৮ সালে ফোরজি এবং ২০২১ সালে রাষ্ট্রীয় টেলিযোগাযোগ সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটকের মাধ্যমে ফাইভ-জি যুগে বাংলাদেশ পদার্পণ করেছে। দেশে বর্তমানে সক্রিয় মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১১ কোটি, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এক কোটি ৭০ হাজার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের শুরুতে যেখানে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো মাত্র আটশত জিবিপিএস ডিজিটাল বাংলাদেশের একযুগে সেখানে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার জিবিপিএস।
বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। মোবাইল ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ। এখাতে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। ই-কমার্স ও এফ কমার্সের দৈনিক লেনদেন মিলিয়ে প্রায় হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মোবাইল হ্যান্ডসেটের দেশে উৎপাদিত কারখানার সংখ্যা প্রায় ১৩টি।
বিপুল সম্ভাবনাময় খাতে এখনো টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তির ব্যবহার প্রায় ৫০ শতাংশ। হ্যান্ডসেট ও এক্সেসরিজের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফোরজি পেনিট্রেশন এখনো চল্লিশ ভাগে উত্তীর্ণ করা যায়নি। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়ন এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ব্যান্ডউইথের দাম কমালেও নাগরিকরা তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং এখনো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো যায়নি। এ সেবার অতিরঞ্জিত অযৌক্তিক সার্ভিস চার্জ ও নিরাপত্তা প্রধান অন্তরায়। জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় পত্র সহ অন্যান্য নাগরিক সেবায় এখনো প্রচুর অনিয়ম এবং ডিজিটাল ভোগান্তি রয়ে গেছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল সেবাতেও নৈরাজ্য রয়েছে। ই-টিকেটিং সিস্টেম এ নাগরিক ভোগান্তি অনেক। ই-কমার্স সেবাতে হাজার হাজার কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। হ্যাকাররা হাতিয়ে নিয়েছে নাগরিকদের ব্যাংক একাউন্ট এর অর্থ।
ডিজিটাল বিন্যাস ব্যবহার করে গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি জালিয়াত চক্র। ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্য সামনে রেখে এটুআই এর উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে কিশোর বাতায়ন, ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, ই-নথি, একশপ, এক পে, জাতীয় হেল্পলাইন-৩৩৩, মন মুক্তপাঠ, শিক্ষক বাতায়ন, এসডিজি ট্র্যাকার, ই-মিউটেশন, উত্তরাধিকার বাংলা, ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড রুম, মাইগভ অ্যাপ, ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব ও আই ল্যাব এবং ইনোভেশন ল্যাব ইত্যাদি।
জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি দপ্তর থেকে প্রদেয় সেবাসমূহ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে দেশের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ ৫১ হাজারেরও অধিক সরকারি দপ্তরে ওয়েবসাইটের একটি সমন্বিত রূপ বা ওয়েব পোর্টাল হলো জাতীয় তথ্য বাতায়ন। এখানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের এ পর্যন্ত ৬৫৭ টি ই-সেবা এবং ৮৬ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট যুক্ত করা হয়েছে। এই বাতায়নে প্রতিদিন গড়ে এক লাখেরও বেশি নাগরিক তথ্য সেবা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য বাতায়ন এর জনপ্রিয় সেবা এর মধ্যে রয়েছে-অর্থ ও বাণিজ্য সেবা, অনলাইন আবেদন, শিক্ষা বিষয়ক সেবা, অনলাইন নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন, নিয়োগ সংক্রান্ত সেবা, পরীক্ষার ফলাফল, কৃষি, ইউটিলিটি বিল, টিকিট বুকিং ও ক্রয়, তথ্য ভান্ডার, ভর্তির আবেদন, আয়কর, যানবাহন সেবা, প্রশিক্ষণ এ স্বাস্থ্য বিষয়ক পোর্টাল কুরিয়ার, ফরমস, ট্রেজারি চালানসহ ডিজিটাল সেন্টার। এখানে রয়েছে ৬শ’রও বেশি ই-সেবা, ১ হাজার ৬০০ এরও বেশি বিভিন্ন সরকারি ফরম অর্থাৎ সকল সেবার ফরম এক ঠিকানায়। রয়েছে কিশোর বাতায়ন-কানেক্ট, ইমাম বাতায়ন, মুক্তপাঠ, সকল সেবা এক ঠিকানায়-সেবাকুঞ্জ, জাতীয় ই-তথ্য কোষ যে কোনো স্থানে, যে কোনো সময় পাঠ্যপুস্তকের সহজলভ্যতার জন্য তৈরী করা হয়েছে ই-বুক।
এতদসত্ত্বেও ডিজিটাল ও ডিজিটাল আর্থিক সেবায় ন্যায্যতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সকল সেবার নিরাপত্তা ,সার্ভিস চার্জ কমিয়ে এনে ইকোসিস্টেম করতে পারলে এবং সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য শতভাগ পড়ানো সম্ভব হবে।