ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসর শুরু হওয়ার পরপরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ‘সাইবার যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিল অ্যানোনিমাস। রাশিয়ার বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উপর সাইবার হামলা চালিয়েছে আলোচিত ও বিতর্কিত হ্যাকারদের দলটি। এবার তাদের কেউ কেউ মুখ খুলেছেন মিডিয়ার কাছে, বলেছেন কর্মপদ্ধতি আর পরিকল্পনার কথা।
এরই মধ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব টিভি চ্যানেল হ্যাক করে সাড়া ফেলেছে তারা।
হ্যাকিংয়ের ঘটনার ছোট একটি ভিডিওর কথা জানিয়েছে বার্তাসংস্থা বিবিসি। টিভি চ্যানেলের প্রতিদিনের নিয়মিত অনুষ্ঠান থামিয়ে তার মধ্যে ইউক্রেইনে বোমা হামলার ছবি আর যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে সৈনিকদের বক্তব্য প্রচার করেছে অ্যানোনিমাসের হ্যাকাররা।
ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি। অ্যানোনিমাস নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কয়েক কোটি ফলোয়ারের সঙ্গে শেয়ার করে ভিডিওটি। এর একটি পোস্টে হ্যাকারদের দলটি বলেছে, “সদ্য পাওয়া খবর, ইউক্রেইনে কী হচ্ছে সেই সত্য প্রচারের জন্য অ্যানোনিমাস রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব টিভি চ্যানেল হ্যাক করেছে।”
এখন পর্যন্ত লাখো মানুষ দেখেছেন ভিডিওটি।
পুরো ঘটনায় অ্যানোনিমাসের সংশ্লিষ্টতার ছাপটাও ছিল স্পষ্ট– মন্তব্য বিবিসির। পুরো ঘটনায় ছিল নাটকীয়তা, দর্শক বা সংশ্লিষ্টদের মনে দাগ কাটার মতো এবং সহজে অনলাইনে শেয়ার করার মতো। আর অ্যানোনিমাসের আগের হ্যাকিংয়ের মতো এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করাও ছিল নেহায়েতই কঠিন কাজ।
তবে, অ্যানোনিমাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হ্যাকারদের ছোট একটি দল দাবি করেছে, হ্যাকিংয়ের জন্য তারাই দায়ী এবং রাশিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের প্রচার ১২ মিনিটের জন্য তাদের হাতেই ছিল।
হ্যাকিংয়ের ঘটনার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়েছে রাশিয়ার বংশদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক নারীর কারণে। এলিজা যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও তার বাবা থাকেন রাশিয়ায়, হঠাৎ টিভি অনুষ্ঠান থমকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে কল করেন তিনি। “যখন এটা ঘটে, আমার বাবা আমাকে কল দিয়ে বললেন, ‘হে ঈশ্বর, ওরা সত্যিটা দেখাচ্ছে।’ তখন আমি তাকে ভিডিও রেকর্ড করতে বলি এবং পরে ভিডিওটি অনলাইনে পোস্ট করি। তার এক বন্ধুও নাকি বিষয়টা দেখেছেন।”
অ্যানোনিমাসের হ্যাকিংয়ের শিকার সেবাগুলোর পরিচালনা করে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রসটেলিকম। তাৎক্ষণিকভাবে হ্যাকিং প্রসঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
আর হ্যাকাররা বলছেন, “গণহত্যার শিকার হচ্ছেন নিষ্পাপ ইউক্রেইনিয়ানরা। ইউক্রেইনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে কিছু করা না হলে আমরা ক্রেমলিনের ওপর হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে যাবো।”
পাশাপাশি, রাশিয়ান ওয়েবসাইটে হ্যাকিং চালানো এবং সরকারি গোপন নথি চুরির দাবিও করেছে হ্যাকাররা। তবে, সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘রেড গোট’-এর অংশীদার লিসা ফোর্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বেশিরভাগ সাইবার হামলাই ছিল “সাধারণ মানের”।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হ্যাকাররা ডিডিওএস হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে, ওয়েবসাইট বা অনলাইন সেবায় মাত্রাতিরিক্ত ডেটা রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে সার্ভার অকার্যকর করে ফেলে হ্যাকাররা। এ ধরনের হামলার ঘটনা আহামরি কিছু নয়, এবং ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে অনলাইন হওয়া যারা বড় কোনো ক্ষতি হয় না।
কিন্তু সাইবার হামলা চালিয়ে টিভি চ্যানেল দখল করা “অবিশ্বাস্যভাবে সৃজনশীল এবং আমার মনে হয়, বেশ কঠিন কাজ,” বলে মন্তব্য করেছেন ফোর্টে।