বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে লোভনীয় স্মার্টফোন বাজার। আর এ বাজারকে খুব শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে অ্যাপল। ব্যবসায়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষে থাকা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অ্যাপলকে টেক্কা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে একমাত্র কোরিয়ান ব্র্যান্ড স্যামসাংয়ের। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন বাজারের ৫৭ শতাংশ হিস্যা অ্যাপলের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্যামসাংয়ের দখলে মাত্র ২৮ শতাংশ। খবর স্যামমোবাইল।
বলা বাহুল্য, একে দ্বিমুখী লড়াই বললে তা বাড়িয়ে বলা হবে। কেননা স্যামসাংয়ের তুলনায় অ্যাপলের বাজার হিস্যা দ্বিগুণের বেশি। তবে ব্যতিক্রমী ব্র্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন মুল্লুকে অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে স্যামসাং। মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যাপল তার নিজ বাজারের একচ্ছত্র আধিপত্য ছাড়া আর কিছুই চায় না। এজন্য তাদের আরো বেশিসংখ্যক আইফোন বিক্রি করতে হবে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আইফোন খুব ব্যয়বহুল। যেহেতু আইফোনের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সেহেতু গ্রাহকদের আইওএস-চালিত অন্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ডিভাইস কেনার সুযোগ নেই। দাম একটি বড় কারণ, তাই কেউ কেউ অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনতে বাধ্য হন। তাই যখন প্রিমিয়াম সেগমেন্টে প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে তখন মানুষকে ফোন কেনানোর জন্য নতুন উপায় খুঁজতে হয়। দেখা যাচ্ছে অ্যাপল এ ধরনের একটি উপায় খুঁজে পেয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ব্লুমবার্গ জানায়, হার্ডওয়্যার সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে আইফোন ও আইপ্যাড বিক্রি শুরু করতে পারে অ্যাপল। এতে বলা হয়, এটা মাসিক অ্যাপ ফির মতো ডিভাইসের মালিকানা দেয়া হবে। অনেক দিন ধরেই অ্যাপল সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক পরিষেবার দিকে সরে যাওয়ার সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এসব উদ্যোগ কোম্পানির জন্য প্রচুর অর্থ আনছে।
গত বছর অ্যাপল মিউজিক, অ্যাপল টিভি প্লাস, আইক্লাউড, অ্যাপল কেয়ার ইত্যাদি সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস থেকে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ৭ হাজার ২২০ কোটি ডলার। বর্তমানে অ্যাপলের সব পরিষেবায় পেইড সাবস্ক্রিপশনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ। এটা বেশ ঈর্ষাজাগানিয়া অর্জনই বলা যায়।
অ্যাপল এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরিতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে কোনো গ্রাহক একবার প্রবেশ করলে অন্য স্মার্টফোন ব্র্যান্ডে যেতে চান না। বিকল্প ইকোসিস্টেম তৈরিতে কেউই তার ধারেকাছে নেই, স্যামসাং তো নয়-ই। যেসব গ্রাহক দামের কারণে আইফোন কিনতে পারছেন না, এবার তাদের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা বিদ্যমান আইফোন আপগ্রেড প্রোগ্রাম থেকে নতুন হার্ডওয়্যার সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতি ভিন্ন হবে। এ পদ্ধতি অনুসারে গ্রাহকদের একটি আইফোন ও অ্যাপল কেয়ারের জন্য ২৪ মাস মেয়াদে অর্থ দিতে হবে। এতে ১২ মাসের পেমেন্ট শেষে নতুন আইফোনে আপগ্রেডের সুযোগ মিলবে। এ সাবস্ক্রিপশন গ্রাহকদের অ্যাপল আইডি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তারা অ্যাপল ওয়ানের অ্যাপল কেয়ার বান্ডল কিনতে পারবেন। সম্মিলিত সাবস্ক্রিশন; যা অ্যাপল মিউজিক, টিভি প্লাস, নিউজ প্লাস ইত্যাদির মতো পরিষেবার জন্য একত্রে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।
হার্ডওয়্যার সাবস্ক্রিপশনের পুরো প্রক্রিয়াটা কীভাবে সম্পন্ন হবে এ নিয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যাচ্ছে না। শিগিগরিই প্রযুক্তি জায়ান্টটি তা খোলাসা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্যামসাংয়ের আগ্রাসী সম্প্রসারণ পরিকল্পনা অনেকটা ধাক্কা খাবে তা স্পষ্ট। কারণ অ্যাপল তার বাজার অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি নতুন গ্রাহক শ্রেণী তৈরির নিত্যনতুন প্যাকেজ নিয়ে আসছে। অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিকট ভবিষ্যতে অ্যাপলের সঙ্গে টেক্কা দেয়া বেশ দুরূহই মনে হচ্ছে।