দেশ এখন শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায়। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ সুবিধা। সম্প্রতি পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিকাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ১৩তম দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এবার ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে ২.১৬ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এর ফলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৃষ্টি হলো নতুন এক মাইলফলকের।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রিন এনার্জি জেনারেশনে কাজ করছে ওয়ালটন। সৌরশক্তি ব্যবহার করে আগামি বছরের মধ্যে ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বাংলাদেশি এই ইলেকট্রনিক্স ও টেক জায়ান্ট। যার প্রথম ধাপে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে ২.১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই ১০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে ওয়ালটন। যা গ্রিন এনার্জি জেনারেশনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাপক অবদান রাখবে।
রোববার (৩ এপ্রিল, ২০২২) গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র হেডকোয়ার্টারে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টটি উদ্বোধন করা হয়। সে সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রীদের হেডকোয়ার্টার কমপ্লেক্সে স্বাগত জানান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুর্শেদ। সে সময় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ডিএমডি লিয়াকত আলী ভুঁইয়াসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রীগণ গ্রিন এনার্জি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ওয়ালটনের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম এবং বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া ঘুরে দেখেন। তারা ওয়ালটনের তৈরি নতুন মডেলের প্রিন্টার এবং মাদারবোর্ড প্রোডাকশন প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিটও উদ্বোধন করেন।
পরিদর্শন শেষে নসরুল হামিদ বলেন, এনার্জি সেভিংয়ে ওয়ালটন খুবই অ্যাডভান্সড। এজন্য তারা বিরাট পরিকল্পনা নিয়েছে। পানির উত্তম ব্যবহার করছে। ওয়ালটন মোস্ট সাসটেইনেবলের দিকে যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। বিদ্যুতের ব্যবহার যত বাড়বে, এনার্জির যোগান যত নিশ্চিত হবে, মানবসূচক উন্নয়ন তত বাড়বে। শিল্পখাতের উন্নয়ন হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এত অল্প সময়ের মধ্যে সুপারফ্যাক্টরি করা সহজ কাজ নয়। ওয়ালটন সেটা সম্ভব করেছে। আমাদের একটি ওয়ার্ল্ডক্লাস ফ্যাক্টরি আছে দেখে খুবই ভালো লাগলো। নিজের দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্সের সবকিছু তৈরি হচ্ছে। ওয়ালটনে কর্মরত সবাই প্যাশনেবল। এখানে ৩০ হাজার কর্মী এক পরিবারের মতো কাজ করে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামি বছর থেকে বাংলাদেশ উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত পণ্যের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সক্ষমতা নির্ধারণে স্টার লেভেলিং করা হবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকারের দেয়া নীতিগত সহায়তা কাজে লাগিয়ে ওয়ালটন অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। ওয়ালটনের এগিয়ে যাওয়ার গল্পটা আমাদের আরো বেশি সাহসী করে, অনুপ্রাণিত করে। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখছেন, ওয়ালটনের মতো দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সেটা সম্ভব হবে। আমাদের প্রত্যাশা ওয়ালটন শীর্ষ গ্লোবাল ব্র্যান্ডে পরিণত হয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তিতে ওয়ালটন পরিবারের পক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগকে অভিনন্দন জানান গোলাম মুর্শেদ। তিনি বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের কারণে এই ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপ হয়েছে। গত এক যুগে যেসব শিল্পবান্ধব নীতি প্রণীত হয়েছে, সেটা চলমান থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ওয়ালটনের মতো আরো অন্তত দশটি বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি তৈরি হবে বলে আমি আশাবাদী।
এর আগে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে প্রতিমন্ত্রীগণ ‘বেটার বাংলাদেশ টুমরো’ উদ্যোগের আওতায় সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রম অর্জনে ওয়ালটনের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র উপভোগ করেন। এরপর তারা সুসজ্জিত প্রোডাক্ট ডিসপ্লে সেন্টার ঘুরে দেখেন। পরে তারা ওয়ালটনের রেফ্রিজটারেটর, কম্প্রেসর, মাদারবোর্ড উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন।