২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের পথে সরকারের আরও একটি পদক্ষেপ হিসেবে যাত্রা শুরু করছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর।
বুধবার (০৬ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) এই বিজনেস ইনকিউবেটর যাত্রা শুরু করবে।
উদ্যোক্তা তৈরি এবং জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানি গড়ে তুলতে বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর থাকলেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিই প্রথম।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আইডিয়াগুলোকে বাস্তবায়ন এবং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ-অবকাঠামো সহায়তা দেওয়া হবে। চুয়েটের এই উদ্যোগটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টারে নির্মিত শেখ জামাল ডরমিটরি ও রোজী জামাল ডরমিটরির উদ্বোধন করবেন।
এই ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার মাঝে একটা সেতু বন্ধন সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের যে অঙ্গীকার করেছি, তা বাস্তবায়নে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মতো অবকাঠামো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। কারণ এখান থেকেই উদ্ভাবিত হবে নতুন নতুন আইডিয়া এবং সেই সকল আইডিয়াকে বাস্তবায়নে রূপদান করার একটি ক্ষেত্র হবে এইসকল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। এই সকল অবকাঠামোই হবে আমাদের আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশকেন্দ্র। যাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের পরিচালক এবং চুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম মশিউল হক মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেন, এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর বিভিন্ন কোম্পানির সাথে শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। উদ্যোক্তা এবং ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ ইকো-সিস্টেম রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টগুলোতে কিভাবে বাস্তব প্রকল্প এবং পণ্যে রূপ দেওয়া যায় আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে অফিস স্থাপন করতে ইতোমধ্যে ক্লিকপ্যাড-অস্ট্রেলিয়ান, এলজি-বাটারফ্লাই, হুয়ায়েই, ওয়ালটন যোগাযোগ করছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান; বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইটি শিল্প এর মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সুযোগ সৃষ্টি করা এবং ভৌত অবকাঠামো তৈরি করা।
চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে ২২০ জনের প্রশিক্ষণ তথা ইনকিউবেশনের সুযোগ রয়েছে।
বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, এমআইটি’র গবেষণা ও উদ্ভাবনের দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে তারা শিল্পের চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করছে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করেছে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। এখানে শিক্ষার্থীদের আইডিয়া ও উদ্ভাবনী ধারণাকে ইনকিউবেট করার সুযোগ করে দেওয়ার ফলে বড় বড় উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির প্রসার ঘটিয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই সরকার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে সরকার।
প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ গ্র্যাজুয়েট বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করে বের হয়। এদের মধ্যে অনেকেই থিসিস, রিসার্চ কিংবা ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের উদ্ভাবনী আইডিয়া জমা দেন। এর মধ্য থেকে যেসব থিসিস, রিসার্চ কিংবা ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলোর অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে সেগুলো বানিজ্যিকীকরণে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ইউনিবেটর প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে। চুয়েটের এই প্রকল্পটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করবে সরকার।
২০১৭ এর জুলাই থেকে শুরু করে ২০২২ এর জুন পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদেই ইউনিক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১৭ কোটি ০৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ১১৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকায় সমুদয় কাজ শেষ করেন সংশ্লিষ্টরা। বাকি ০৩ কোটি ২২ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, চুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রায় ৫ একর (৪.৭ একর) জমির ওপর ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে—স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, ই-লাইব্রেরি, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, এক্সিবিশন/প্রদর্শনী সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি। উদ্যোক্তা ও গবেষকদের কাজের সুবিধার্থে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি বিগ ডাটা ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল রয়েছে।
এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্নার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, প্রেস/মিডিয়া কাভারেজ জোন, নিজস্ব পার্কিং সুবিধা প্রভৃতি। অন্যদিকে মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম এবং ৩০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক ৮টি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট পৃথক দুইটি (১টি নারী ও ১টি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে।
এছাড়া দুটি মিনি সুপার কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব শিগগিরই স্থাপিত হতে যাচ্ছে।