উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় গণমাধ্যম কর্মীদের মতামত দিতে আগামী ১০ দিন সময় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এজন্য দ্রুততম কময়ে সংশোধিত খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে এবং সেখানেই ই-মেইলে মতামত দেয়া যাবে।
পলক বলেন, তথ্য-উপাত্তের স্বাধীনতা ও সুরক্ষার নিশ্চিত করতে ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২২’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ডাটা যেনো বিদেশি কেউ ব্যবহার করতে না পারে তার যথাযথ সুরক্ষা থাকছে এই আইনে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্মতি ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কাছে যেনো ডাটা না যায় সেই সুরক্ষার জন্য এই আইন করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
বুধবার (১০ আগস্ট) বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সম্মেলন কক্ষে প্রস্তাবিত ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২’ এর খসড়া বিষয়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সুপারিশ ও মতামত নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ সব কথা জানান তিনি।
আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে স্বগত বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের আইন ও পলিসি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিৎ কুমার সরকার জানান, ২৪ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত অনলাইনে মাতামত নেয়া হয়েছে। তবে অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে মতামত নেয়া হচ্ছে। আপরাদের সুচিন্তিত মতামত আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে কাজে লাগবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের তথ্য-উপাত্তের স্বাধীনতা ও সার্বোভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আইন করা হচ্ছে জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ডেটা হচ্ছে ওয়েল। অতি মূল্যবান সম্পদ। তাই একদিকে যেরকম ডেটা প্রাইভেসি প্রোটেকশন দরকার; অপরদিকে ডেটার একটা ক্লাসিফিকেশন দরকার যাতে অ্যানোনিমাস ডেটাগুলো আমরা বিভিন্ন বিজনেস কেইস ও সরকারের সেবায় ব্যবহার করতে পারি। অপরদিকে আমাদের কোনো বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানি যেনো আমাদের অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করতে না পারে। মূলতঃ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষন ও তথ্য-উপাত্তের স্বাধীনতা ও নিরপতত্তা নিশ্চিত করতেই এই আইনের প্রস্তাব করছি। কেননা আগামী পৃথিবীতে যারাই ডিজিটিাল ডেটা সংরক্ষণ করতে পারবে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে কাজে লাগাবে; তারাই হবে সম্পদশালী দেশ; সমৃদ্ধ জাতি।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্মতি ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কাছে যেনো ডেটা না যায়; সেই সুরক্ষার জন্য এই আইন করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। সেই ধারাবহিকতায় এরপর ডেটা বিজ্ঞানী ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে খসড়া আইন নিয়ে বৈঠক করা হবে।
আইনটি ‘ক্রস বার্ডার এজেন্ডা’ উল্লেখ করে এই আইন তৈরিতে অন্য দেশের আইন অনুকরণ করা হচ্ছে না। এখানে আমরা জিডিপিআর অনুসরণ করছি না। আশিয়ান ক্রেস বর্ডার ডেটা প্রোটেকশন রুলস অনুসরণ করছি। কেননা, এটা নির্দিষ্ট দেশের জন্য করা হয়নি। পাশাপাশি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে কাজ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ডেটার নিরাপত্তা সহ সাইবার সুরক্ষা বিষয়ক যে কোনো পরামর্শ পেতে ৩৩৩ তে ফোন করার পরামর্শ দেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকগণ খসড়া আইনটির বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় সংবাদিকদের দেয়া নানা পরামর্শের ওপর খসড়া আইনটির বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন আইসিটি বিভাগের আইন ও পলিসি অনুবিভাগের পরামর্শক ও সাবেক লেজিসলেটিভ সচিব মো. শহীদুল হক।
সভায় জানানো হয় খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২২ বিষয়ে পরবর্তীতে ডাটা বিজ্ঞানী ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের এমডি মোজাম্মেল বাবু, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, এনটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক জহিরুল আলম, ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার জাইমা ইসলামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ খসড়া আইনটির বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। উন্মুক্ত এই আলোচনায় বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামে সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম ঢেউ, চ্যানেল আই এর চিফ নিউজ এডিটর (সিএনই) জাহিদ নেওয়াজ খান, নিউজ ২৪ এর নিউজ এডিটর শুভ অঙ্কুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।