আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযোগ গড়ে উঠতে যাচ্ছে ইন্টারনেটের। এর ফলে কোনো মানুষ শুধু কোনো একটি বিশেষ টপিক বা প্রশ্নের কথা চিন্তা করলেই ইন্টারনেটের বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রবেশ করতে পারবে। মস্তিষ্কের কমাণ্ডেই স্ক্রিনে ভেসে উঠবে কোনো বিষয়ের সার্চ রেজাল্ট।
এই প্রযুক্তির সাহায্যে হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘ম্যাট্রিক্স’-এ যেভাবে মস্তিষ্কে তথ্য ডাউনলোড করা যায় ঠিক সেভাবেই আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য ডাউনলোড করা যাবে।
আর মানুষ যে কোনো সময় ইন্টারনেটে সংরক্ষিত সব জ্ঞানের ভণ্ডারে তাৎক্ষণিকভাবে প্রবেশ করতে পারবে। যার ফলে মানুষের জ্ঞানার্জনের সক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে যাবে এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশও হবে ব্যাপকভাবে।
আর এর ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই জগতের সকল মানুষকে নিয়ে তৈরি হবে ‘গ্লোবাল ব্রেন নেটওয়ার্ক’ বা ‘বৈশ্বিক মহামস্তিষ্ক’। কম্পিউটার এবং বায়োটেকনোলজির অভাবনীয় সাফল্যেই এমনটি ঘটবে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। এ বিষয়ে তাদের দেয়া তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল ফন্টিয়ার্স ইন নিউরোসায়েন্সের এক নিবন্ধে।
এ বিষয়ে গবেষণায় জড়িত অন্যতম ব্যক্তিত্ব রবার্ট ফ্রেইটাস জুনিয়র বলেছেন, ন্যানোপ্রযুক্তিতে মানব মস্তিষ্কে ন্যানোবোট হিসেবে কিছু অতি ক্ষুদ্রকায় রোবট স্থাপন করা হবে। এই ন্যানোবোটগুলোই মানুষের মনের সাথে সুপার কম্পিউটারের যোগাযোগ রক্ষার কাজ করবে।
ন্যানোবোটগুলো শুরুতে মানুষের রক্তপ্রবাহের পথ বেয়ে শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোষরাজিতে সুনির্দিষ্টভাবে অবস্থান করবে। মস্তিষ্কে ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার হিসেবে পরিচিত একটি বাধার দেয়াল থাকার কারণে মানুষের রক্তপ্রবাহের সব উপাদানই মস্তিষ্কে ঢুকতে পারে না। কিন্তু এই ন্যানোবোটগুলো সে বাধা পার হতে সক্ষম।
বর্তমান সময়ে একাধিক কম্পিউটারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আমরা এখনই ব্যবহার করছি। কিন্তু একাধিক মানুষের মস্তিষ্ক অবলম্বনে ‘ব্রেইন নেটওয়ার্ক’ সৃষ্টির এই প্রাথমিক কাজে ইতোমধ্যে গবেষকরা সফল। এই গবেষণা শেষে ইইজির মাধ্যমে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে একাধিক ব্যক্তির মস্তিষ্কের যোগাযোগ স্থাপন করে টাটরিসের মতো খেলাও সফল ভাবে খেলা হয়েছে।
তবে এ ধরনের ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহারের আগে মানব দেহে এর প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা করবেন। তাদের বিশ্বাস, শেষ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ভবিষ্যতে মানুষের মস্তিষ্কের আওতায় গোটা ইন্টারনেটের তথ্য চলে আসবে। আর এরই সঙ্গে পুরো বিশ্বের মানুষের একযোগে চিন্তা করার সুযোগও তৈরি হবে। আর এভাবেই একদিন বিশ্ব মানবের প্রতিটি মস্তিষ্কের সাহায্যে গড়ে উঠবে ‘বৈশ্বিক মহামস্তিষ্ক’ বা ‘গ্লোবাল সুপারব্রেন’।
মানব মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গ যুক্ত করার একটি প্রযুক্তি, সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ইন লুসানে (ইডিএফএল)
ইউসি বার্কলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মলকিউলার ম্যানুফেকচারিং ইনস্টিটিউট এর গবেষক ড. নুনো মার্টিনস বলেন, ‘এর ফলে মানুষের চিন্তার বিকাশেও এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। কেননা এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একই সঙ্গে অসংখ্য মানুষকে উন্নত চিন্তা করতে সক্ষম করে তোলা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে অনেক মানুষকে একই ধরনের চিন্তা করতে সক্ষম করে তোলা যাবে।’
‘এই ব্রেন নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে পারে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জোরদার করতে পারে। এবং অবশেষে সাংস্কৃতিক ভাবে আলাদা জনগোষ্ঠীগুলোর বৈচিত্রের মধ্যেই ঐক্য স্থাপন করতে পারে। যার ফলে সত্যিকার অর্থেই এক বৈশ্বিক মানব সমাজের আবির্ভাব ঘটবে।’
ড. নুনো মার্টিনস আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও চলতি শতক শেষ হওয়ার আগেই হয়তো আমরা ‘গ্লোবাল ব্রেন নেটওয়ার্ক’ বা ‘বৈশ্বিক মহামস্তিষ্ক’ তৈরি করে ফেলতে পারবো।’
সূত্র: ডেইলি মিরর, ডেইলি মেইল