ডাক বিভাগের নতুন ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ সম্প্রতি নবনির্মিত একটি টিভিসি (বিজ্ঞাপন) নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমতো সমালোচনা করছেন দর্শকরা। তাদের মতে, প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নগদের এমন বিজ্ঞাপনে প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি বাবাকে ছোট করা হয়েছে, যা খুবই অমানবিক।
যদিও বিজ্ঞাপনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ‘নগদ’-এর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিজ্ঞাপনটি এখানেই শেষ নয়। এটি ধারাবাহিক বিজ্ঞাপনের একটি পর্ব মাত্র। পরের পর্বগুলোতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন দর্শকদের আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।
তবে এ ধরনের বিজ্ঞাপন কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই বিজ্ঞাপনটিতে বাবাদের ছোট করা হয়েছে। এখানে ভালো কোনো ম্যাসেজ নেই। বরং এই বিজ্ঞাপনে বাবাদের হেয় করা হয়েছে। যেটি কোনো ভাবেই কাম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও একজন বাবা। বাবাদের ব্যর্থতা থাকতে পারে, তবে চেষ্টা কোনো ঘাটতি থাকে না। হয়তো সমাজে দুই-এক জন বাবা এরকম থাকতে পারে, তার মানে এই নয় যে বাবারা সন্তানদের প্রতি কোনো ভূমিকা রাখছে না। মন চাইলে কোনো প্রতিষ্ঠান যা ইচ্ছে তাই বিজ্ঞাপন তৈরি পারে না। এই ধরনের বিজ্ঞাপন যাতে ভবিষ্যতে তৈরি করা না হয় সংশ্লিষ্টদের সেই বিষয়ে ভূমিকা রাখা উচিৎ। ’
বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায়, ‘মেয়েটির মা ছোট বেলায় মারা যায়। অভাবি ছোট্ট সংসার। মা মারা যাওয়াই মেয়ের জন্য বাবা ছোট খাটো কিছু কিছু কাজ না করায় ও পড়াশুনার টাকা প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় মেয়ে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে শহরে পাড়ি জমায়। স্টেশনে বাবা তাকে একটি ব্যাগে স্বাধ্য মতে টুকিটাকি কিছু বাজার সদাই করে মেয়েকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছে। শহরে গিয়ে মেয়ের নিজের পড়াশুনা, স্টুডেন্ট পড়ানোসহ বিভিন্ন কাজ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাবা মেয়েকে ফোন করে খবর নিতে চাইছে তখন মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে বাসায় বসে আছে। বাবার ফোনে টাকা না থাকায় হোক কিংবা অন্য কোনো কারনেই হোক মেয়ের সঙ্গে বাবার যোগাযোগ সব সময় হয়ে ওঠে না। বাবা মেয়ের অবস্থা জানতে চাইলে বাবাকে ম্যাজাজ দেখিয়ে কথা বলে। মেয়ে তার বাবাকে বলে আমার সমস্যা তুমি জেনে কি করবে, কিছু তো করতে পারো না…… এক পর্যায়ে তার বাবা নগদের মাধ্যমে তাকে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। আর মেয়েকে তার বাবা বলেন এখন থেকে তারা এক সঙ্গে থাকবেন। যদিও বাবা কেন মেয়েকে টাকা দিতে পারছেন না তার অভাব ও পরিশ্রমের গল্প তুলে না ধরা হয়নি।
বিজ্ঞাপনের সমালোচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলছেন বাবার পেছনে লুকিয়ে থাকা অভাব ও পরিশ্রমের গল্প তুলে ধরে না বাবাদের ছোট করা হয়েছে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ তার টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘নগদের এমন একটি বিজ্ঞাপনে যে কোনো বাবার জন্য অপমানজনক।’ শেখ জামাল নামে আরেকজন সমাজকর্মী তার টাইমলাইনে লিখেছেন ‘বাবার উপর ভরসা করা যায় না! নগদ নামে এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার বাদ দিতে হবে। বিজ্ঞাপনটি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। নতুন প্রজš§ শিখতেছে কি?’
হাসান সাফায়াত নামে একজন তার টাইম লাইনে লিখেছেন- মাতাল হয়ে বিজ্ঞাপন বানালে তো এমন হবেই। তার এ কমেন্টে অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করছেন। সেখানে ফারহানা আলম কমেন্টে লিখেছেন কিছু কথা এদিক সেদিক করলে অন্তত সহ্য করা যেত। ভয়াবহ রকমের বাজে বিজ্ঞাপন। অনসূয়া কবির নামে একজন লিখেছেন- এই অ্যাড এর কন্সেপ্ট কপি করা হয়েছে একটা কোরিয়ান অ্যাড থেকে কিন্তু কপিটা ঠিকঠাক করতে পারলো না। যদিও কোরিয়ান অ্যাডটিতে বাবাকে ছোট করেনি, তার চেস্টাটুকু দেখিয়েছে। আর নগদ…. জঘন্য। যা ভবিষ্যত প্রজšে§র জন্য নেতিবাচক।
নগদের বিজ্ঞাপনের বিষয়টি নিয়ে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সীমাবন্ধ থাকেনি। কর্পোরেট অফিস থেকে চায়ের দোকান ও লোকাল বাসেও সমালোচনার ঝড়। তাদের মতে, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এদেশের প্রতিটি বাবাকেই ছোট করা হয়েছে। যে দেশের বিজ্ঞাপন দাতারা কোনো বাছ-বিচার না করেই বাবাদের ছোট করছেন। তারা নিজেরাই অসভ্য বাকিদেরও অসভ্য বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। নিজের বাবাকে ছোট করে ব্যবসায় পরিচিতির জন্য এমন জঘন্যতম বিজ্ঞাপন ভবিষ্যত প্রজšে§র জন্য অন্ধকার।
এ বিষয়ে নগদের হেড অব কর্পোরেটের সোলায়মান সুখন বলেন, ‘এমন অনেক ঘটনায় বাস্তব জীবনে ঘটছে। যে বিজ্ঞাপনটি দেখানো হচ্ছে সেটির গল্প শেষ হয়নি। এটির পরবর্তী আরও কিছু পর্ব বিজ্ঞাপনে দেখানো হবে। তখন বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।’