ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সংস্কৃতির শক্তি অদম্য। মুক্তিযুদ্ধকালে আমরা সেই সাংস্কৃতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়েছি। সংস্কৃতির শক্তিকে হৃদয়ঙ্গম করে মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার আন্দোলনে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় চলমান সংগ্রামকে আরও বেগবান করতে মন্ত্রী দেশব্যাপী সংস্কৃতিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী শুক্রবার রাতে ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালায় নাট্যচক্র এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘নাট্যচক্র: ধাত্রী নবধারার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
নাট্যচক্র-এর সভাপতি ম. হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নাট্যসারথী আতাউর রহমান, মামুনুর রশিদ, নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, দেবপ্রসাদ দেবনাথ এবং খায়রুল আলম সবুজ প্রমূখ বক্তৃতা করেন। সংগঠনের সহসভাপতি ফাল্গুনি হামিদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্র্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূতিকাগার । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬৬‘র ছয়দফা, ৬৮‘র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯‘র গণঅভ্যূত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি টিএসসিতে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে এদেশে সুষ্ঠু ধারার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তিনি তরুণ সমাজের হাতে গড়ে তোলা সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী এদেশের নাটকের পঞ্চাশ বছরের পথচলায় স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্পৃক্ততা তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে সংস্কৃতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছি। ৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ডাকসুর উদ্যোগে মঞ্চস্থ তার লেখা এক নদী রক্ত মঞ্চায়নের কথা স্মরণ করেন। তিনি জানান যে সেই নাটকটিতে শহীদ শেখ কামাল অভিনয় করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে মুক্তিযুদ্ধ ফেরৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নাটকের মানুষ ছিলেন না, তবুও সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক ধারা প্রতিষ্ঠায় দেশে নাট্য আন্দোলন গড়ে তুলেন।
সূর্যসেন হল ছাত্র সংসদের নাট্য ও প্রমোদ সম্পাদক হিসেবে নাট্যচক্র প্রতিষ্ঠায় এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সমাজ পরিবর্তনে সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রতিমূহুর্তের যুদ্ধ।
নাটক বিশেষ করে মঞ্চ নাটক মানুষের ওপর যতটা প্রভাব বিস্তার করে অন্য কোন মাধ্যম তা পারে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত শক্তিশালী করতে না পারলে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা শাণিত হবে না।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রথম ও একমাত্র গণনাট্য ‘এক নদী রক্ত’ এর নাট্যকার জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘পয়েটস অব পলিটিক্স।” বঙ্গবন্ধুর ভাষা, কথা সবই কবিতা। যা দিয়ে বাঙালিকে উজ্জীবিত করেছিলেন। সাংস্কৃতিক, সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক জীবনের সর্বত্র আজ অবক্ষয় হচ্ছে। অবক্ষয় রুখতে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তুলতে হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ম হামিদের নেতৃত্বে নাট্যচক্রের পথচলা নতুনদের অনুপ্রাণিত করবে এবং দেশে নতুন ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে।
পরে নাট্যচক্র পরিবেশিত ম. হামিদ পরিচালিত এক্সপ্লসিভ ও মূল সমস্যা শীর্ষক নাটকটির পুণমঞ্চায়ন হয়।