বাংলাদেশে প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করছেন এক দল শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে সফলভাবে স্যাটেলাইটের প্রোটোটাইপ বা টেকনিক্যাল মডেল তৈরি করেছেন তাঁরা। বর্তমানে স্যাটেলাইটের মূল অংশ বা ফ্লাইট মডেলের কাজ করছেন বেসরকারি আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এইউএসটি) ইইই বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের এ কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক।
আগেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরিতে সফল হয়েছেন। তবে সেটি জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। আব্দুল্লাহ হিল কাফি, রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা ও মাইসুন ইবনে মনোয়ারের তৈরি ন্যানো স্যাটেলাইট ‘অন্বেষা’ ২০১৭ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়।
তবে এবার বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া কাস্টমাইজড ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি করতে যাচ্ছেন আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ২২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের দুই ইউনিটের স্যাটেলাইট তৈরিতে সফলতা এলে নিজস্ব উদ্যোগে ন্যানো স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। সহজ হবে ভূমি জরিপ, কৃষি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা জানান, ‘এইউএসটিস্যাট’ নামের স্যাটেলাইটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে এবং এর গ্রাউন্ড স্টেশন হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পে জড়িত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মাহদী হাসান জানান, বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। ভারতের ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। বাংলাদেশে ব্র্যাকের থাকলেও জাপানের সহায়তায়। এ থেকেই নিজস্ব প্রযুক্তি ও মেধায় ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরির কথা ভাবেন তিনি। এর পর বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আব্দুস শাকুর সিয়াম, আ ন ম আল মুহি, মারুফ হোসাইন ও মিরাজ হোসাইনকে নিজের চিন্তায় যুক্ত করেন। গত বছর জুনে বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে জানান। তাঁর তত্ত্বাবধানে ছয় মাসের পরিশ্রমে কাস্টমাইজড প্রোটোটাইপ তৈরিতে সফল হন। এর পর স্যাটেলাইটের একটি টেকনিক্যাল মডেল করে সেটির আদলে মূল অংশ বা ফ্লাইট মডেল তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। ফ্লাইট মডেল বিস্তর এবং মহাকাশে উৎক্ষেপণে গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা প্রয়োজন। এ জন্য বিভাগের প্রধান ছাড়াও অন্য শিক্ষকদের এ প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাহদী হাসান বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে সামগ্রীর জোগানকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে। অনেক কিছু দেশে পাওয়া যায়নি। পরে নিজেরা সেগুলো তৈরি করেছি। যেমন সৌরবিদ্যুৎ কাঠামো তৈরি করেছি। ফ্লাইট মডেলের সামগ্রী বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা এটি উৎক্ষেপণের আশা করছি।’
প্রকল্প দলের তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, ‘কাস্টমাইজড মডেলটির ফ্লাইট অংশ তৈরির পর পরীক্ষা ও উৎক্ষেপণ করতে হবে। এর পর এটি চালু হবে। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ইমেজ প্রসেসিং করে জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে, কৃষি ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষাসহ নানা বিষয় ও গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত হবে।’
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহ?জাহান মাহমুদ বলেন, ‘এইউএসটির শিক্ষার্থীরা প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন। এখনও অনেক কাজ বাকি। ব্র্যাকের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছিল, জাপানে সুবিধা থাকায় তারা পরীক্ষা করতে পেরেছিল। এখানে টেস্টিং ও লঞ্চিং সুবিধা নেই। এ জন্য নির্মাণ শেষে বিদেশে পাঠাতে হবে। সবকিছু সফল হলে এটি হবে নিজস্ব মেধায় প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট।’