চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নিজেদের বার্ষিক বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা। বিভিন্ন শিল্পে চলমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে কোম্পানিগুলোর বিশাল ছাঁটাই কার্যক্রমের বিপরীতে তারা এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে উঠে এসেছে মার্কিন বাণিজ্যিক প্রকাশনা দ্য ইনসাইডারের প্রতিবেদনে। দেখে নেওয়া যাক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোয় নিজের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া এই ছয় সিইও কারা-
অ্যাপল সিইও টিম কুক
জানুয়ারিতে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)’র কাছে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালে নিজের বার্ষিক বেতন ৪০ শতাংশ কমিয়ে চার কোটি ৯০ লাখ ডলারে নিয়েছেন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক।
সম্প্রতি তার বিশাল বেতন নিয়ে কােম্পানির শেয়ার মালিকদের ছোট একটি অংশ সরব হলে এই বেতন কমানোর অনুরোধ করেন কুক নিজেই। ২০২২ সালে অ্যাপলে বিনিয়োগ করা এক বিনিয়োগ কোম্পানি কুকের প্রায় ১০ কোটি ডলারের ‘পে প্যাকেজ’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
‘এসইসি’তে জমা দেওয়া অ্যাপলের নথিতে কুকের ২০২১ ও ২০২২ সালের বার্ষিক বেতন নিয়ে ‘উদ্বেগ’ ছিল। ইনসাইডার বলছে, ২০২৩ সালের সিদ্ধান্তটিও এসেছে ‘শেয়ারমালিকদের প্রতিক্রিয়ায় ভারসাম্য, অর্থপূর্ণ কার্যক্ষমতা ও প্রণোদনা তৈরি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ও পরিবর্তনের পক্ষে কুকের সমর্থন’ থাকার কারণে।
ইনটেল সিইও প্যাট গেলসিংগার
গেল পয়লা ফেব্রুয়ারি কোম্পানির খরচ কমানো ও কর্মী ছাঁটাই প্রতিরোধের অংশ হিসেবে এ বছর নিজের বেতন ২৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন চিপ নির্মাতা ইনটেলের প্রধান নির্বাহী প্যাট গেলসিংগার।
গেলসিংগারের পাশাপাশি কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরাও পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন কমাচ্ছেন।
“এইসব পরিবর্তন আমাদের কার্যনির্বাহী জনবলকে তুলনামূলক উল্লেখযোগ্য উপায়ে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্যে নকশা করা হয়েছে। এটি আমাদের রূপান্তরের পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও সামগ্রিক কর্মশক্তি সমর্থনেও সহায়তা করবে।” –ইনসাইডারের প্রতিবেদকে বলেন ইনটেলের এক মুখপাত্র।
গোল্ডম্যান স্যাকস সিইও ডেভিড সলোমন
২০২২ সালে নিজের বেতন ৩০ শতাংশ কমিয়ে আড়াই কোটি ডলারে নিয়েছেন বিনিয়োগ কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড সলোমন।
এসইসি’র কাছে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী, তার মূল বেতন ২০ লাখ ডলার থাকলেও বার্ষিক বেতন বাবদ দুই কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেন তিনি, যা গত বছরের তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার থেকে কমে এসেছে।
ব্যাংকটির অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার চলমান লড়াইয়ের মধ্যেই এই বেতন কমানোর ঘটনা ঘটলো। পাশাপাশি, নিজেদের বৈশ্বিক কর্মশক্তির সাড়ে ছয় শতাংশ ছাঁটাই করেছে কোম্পানিটি।
মরগান স্ট্যানলি সিইও জেমস গরম্যান
২০২২ সালে নিজের বেতন ১০ শতাংশ কমিয়ে তিন কোটি ১৫ লাখ ডলার বাড়িতে নিয়েছেন বিনিয়োগ কোম্পানি মর্গান স্ট্যানলির প্রধান নির্বাহী জেমস গরম্যান।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আর্থিক জায়ান্ট বলেছে, কার্যক্রমটি এমন ‘এক চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও বাজার পরিবেশের’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে, যেখানে কোম্পানিটি ‘এর আগের বছরের রেকর্ড স্পর্শ করার মতো’ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না।
২০২২ সালে নিজেদের বৈশ্বিক কর্মশক্তির দুই শতাংশ অর্থাৎ আনুমানিক ৮১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে কোম্পানিটি।
গুগল সিইও সুন্দার পিচাই
জানুয়ারিতে গুগলের মালিক কোম্পানি অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী সুন্দার পিচাই নিজস্ব কর্মীদের বলেন, কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা নিজেদের বার্ষিক বোনাস উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে ফেলবে। তবে, বেতন কমানোর আকার বা মেয়াদ সম্পর্কে তিনি কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি।
কোম্পানির এক বৈঠক চলাকালীন পিচাই কর্মীদের বলেন, এই ছাঁটাই কার্যক্রমের সঙ্গে কোম্পানির কার্যদক্ষতার বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত।
কোম্পানির ছয় শতাংশ অর্থাৎ ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরপরই তার এই মন্তব্য এলো। ইনসাইডার গুগলের একটি মেমো দেখেছে যেখানে পিচাই লিখেন, গোটা অ্যালফাবেটের পণ্য খাত, ফাংশন, স্তর ও অঞ্চলজুড়ে এই ছাঁটাই কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
জেপিমরগান সিইও জেমি ডিমন
২০২১ সালের মতো ২০২২ সালে বিনিয়োগ কোম্পানি জেপিমরগানের প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমন তিন কোটি ৪৫ লাখ ডলার বেতন পেলেও গত বছর বিশেষ এক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে তাকে আর লাখ লাখ ডলার সমমূল্যের ‘বিশেষ পুরস্কার’ দেওয়া হয়নি।
জানুয়ারিতে এসইসি’র কাছে জমা দেওয়া নথিতে জেপিমর্গান পর্ষদ লিখেছে, ভবিষ্যতে জেমিকে কোন ধরনের বিশেষ পুরস্কার দিতে বাধ্য নয় তারা। ২০২১ সালে তার আট কোটি ৪৪ লাখ ডলারের বিশাল বেতন নিয়ে সমালোচনার বিপরীতে এই পদক্ষেপ এলো।
বাজার বিশ্লেষক সংস্থা মার্কেটওয়াচের তথ্য অনুসারে- তার এই বেতনের সোয়া পাঁচ কোটি ডলারই এসেছে বিভিন্ন পুরস্কার থেকে।