নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের কিছু সংখ্যক কুখ্যাত ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে সম্ভবত অর্থ উপার্জন করছে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম টুইটার। গবেষণায় উঠে আসা তথ্য বলছে এই অর্থের পরিমান কোটি ডলারের বেশিও হতে পারে।
‘সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইট (সিসিডিএইচ)’ নামের অলাভজনক সংস্থার গবেষণা বলছে, একসময় প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ ছিল, এমন কেবল ১০টি অ্যাকাউন্টের কাছ থেকে বছরে এক কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিজ্ঞাপনী আয় করবে টুইটার।
ওই প্রতিবেদনে ঘৃণামূলক কনটেন্ট ও বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রবাদের তথ্য প্রকাশ করা এমন ১০টি অ্যাকাউন্টের বর্তমান কার্যক্রমের ওপর অনুসন্ধান চালানো হয়। ইলন মাস্কের অধিগ্রহণের পর টুইটার তাদের অ্যাকাউন্ট প্ল্যাটফর্মে পুনরায় ফিরিয়ে আনে। এই দলে আছেন ইনফ্লুয়েন্সার অ্যান্ড্রু টেইট, মার্কিন বিতর্কিত ওয়েবসাইট ‘ডেইলি স্ট্রমার’-এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ড্রু অ্যাংগ্লিন, পরিচিত ‘ভ্যাক্সিন বিরোধী’ রবার্ট মেলোন ও মার্কিন সাইট ‘গেইটওয়ে পান্ডিট’সহ বেশ কিছু সংখ্যক চরমপন্থী ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সংশ্লিষ্ট হাই প্রোফাইল অ্যাকাউন্ট।
এইসব অ্যাকাউন্টের নাগাল ও সম্পৃক্ততা অনুমানে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যবর্তী ৪৭ দিনের প্রায় ১০ হাজার টুইট বিশ্লেষণ করে দেখেছে সিসিডিএইচ।
তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দৈনিক গড়ে এই দশটি অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন টুইট থেকে সর্বমোট পাঁচ কোটি ৪০ লাখ সম্পৃক্ততা মিলেছে।
“এই গড় হিসাব করলে, এইসব অ্যাকাউন্ট থেকে তিনশ ৬৫ দিনে প্রায় দুই হাজার কোটি সম্পৃক্ততা মিলবে।”
ওইসব সম্পৃক্ততা টুইটারের জন্য কী ধরনের বিজ্ঞাপনী আয় তৈরি করতে পারে, সেটি নির্ধারণের উপায় হিসেবে সিসিডিএইচ বলছে, তারা তিনটি নতুন টুইটার অ্যাকাউন্ট বানিয়েছে, যা কেবল প্রতিবেদনে উল্লেখিত ১০ জন ব্যবহারকারীকে ফলো করে।
ওই গবেষণাপত্রের লেখকরা খুঁজে পেয়েছেন, প্রতি ছয় থেকে সাতটি টুইটের পরপর একবার করে বিজ্ঞাপন দেখা যায়। পরবর্তীতে, বিশ্লেষক কোম্পানি ‘ব্র্যান্ডওয়াচের’ ডেটা ব্যবহার করে তারা অনুমান প্রকাশ করেন, “টুইটারে প্রতি এক হাজার সম্পৃক্ততায় গড় খরচ ছয় দশমিক চার ছয় ডলার।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই অ্যাকাউন্টগুলোর সর্বমোট সম্ভাব্য বার্ষিক আয় হিসেবে এক কোটি ৯০ লাখ ডলারের সংখ্যাটি প্রকাশ করেছে সিসিডিএইচ।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইসব অনুমান কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে উপার্জনের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না দেখালেও, এটি প্ল্যাটফর্মে থাকা অল্প কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী অ্যাকাউন্ট কতোটা অর্থকরী হতে পারে, সে ধারণা মেলে।
আর বিভিন্ন প্রভাবশালী অ্যাকাউন্ট প্ল্যাটফর্মে ফিরিয়ে টুইটার আর্থিকভাবে কতোটা লাভবান হতে পারে, ওই বিষয়টিও বোঝা যায় এর মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত সবগুলো অ্যাকাউন্টই এক সময় ‘আজীবন’ নিষিদ্ধ ছিল টুইটারে। তবে, আইন ভাঙেননি এমন ব্যক্তিদের বেলায় মাস্কের ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণার পর তাদের পুনরায় প্ল্যাটফর্মে ফেরানো হয়। সম্প্রতি আরও নিষিদ্ধ অ্যাকাউন্ট প্ল্যাটফর্মে ফেরানোর বিষয়ে আবেদন অনুমোদন পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে টুইটার।
মাস্কের অধিগ্রহণের পর থেকে টুইটারের বিজ্ঞাপনী ব্যবসাতেও বড় খড়্গ নেমে এসেছে। প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে এসেছে বেশ কিছু শীর্ষ বিজ্ঞাপনদাতা। সংবাদ সাইট প্ল্যাটফর্মারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতে প্ল্যাটফর্মটির বিজ্ঞাপনী আয় কমে এসেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
ওই গবেষণায় বেশ কয়েকটি ঘটনার কথাও উল্লেখ রয়েছে, যখন সুপরিচিত বিজ্ঞাপনদাতাদের দেওয়া বিজ্ঞাপন ব্যবহারকারীদের কাছে আপত্তিকর ও জ্বালাময়ী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, অ্যান্ড্রু অ্যাংগ্লিনের এমন এক টুইটের নীচে ‘প্রাইম ভিডিও’র বিজ্ঞাপন দেখা গেছে, যেখানে লেখা ছিল, “নারীরা মেধার ভিত্তিতে কেবল একটি কাজই করতে পারেন, তা হলো যৌনকর্মী হওয়া।”
ওই প্রতিবেদনে মার্কিন রাগবি প্রতিযোগিতা ‘এনএফএল’-এর একটি বিজ্ঞাপনের কথাও উঠে এসেছে, যা সরাসরি কোভিড ১৯ নিয়ে ভুল তথ্য সংশ্লিষ্ট এক টুইটের নীচে দেখা গেছে।
“এই কার্যক্রম নিশ্চিত করে, টুইটার আমাদের তদন্ত করা প্রত্যেক ‘বিষাক্ত’ অ্যাকাউন্টের পাশে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে, যদিও এর পেছনে থাকা ব্যক্তিরা ঘৃণামূলক মতামত ও মিথ্যা প্রচারণার জন্য পরিচিত।” –লিখেছে সিসিডিএইচ।