একটা সময় সবার হাতে হাতে ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল। বিশেষ করে যেকোনো মুহূর্তের ভিডিও ধারণে এর জনপ্রিয়তা ছিল অনেক। তরুণদের পছন্দের শীর্ষেও ছিল এ ডিভাইস। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেলেও আবারো জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে প্রায় দুই দশক আগের ডিজিটাল ক্যামেরা।
অনলাইন ট্রেন্ডের কারণে তরুণরা বর্তমানে ডিজিটাল ক্যামেরা সংগ্রহে বেশি আগ্রহী। ফলে ইবে ও ইটসির মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পুরনো এ গ্যাজেট খোঁজার হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এছাড়া এক বছরে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে ডিজিটাল ক্যামেরা হ্যাশট্যাগ দেয়া ভিডিওগুলোর ভিউ ২২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। চাহিদা বাড়ার এ ঘটনাকে বিশ্লেষকরা শতাব্দীর পুরনো ফ্যাশন সামগ্রীর পুনরুত্থান হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
রেট্রো কিট হিসেবেই ডিজিটাল ক্যামেরা বর্তমানে পরিচিত। আর এটি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখের বেশি লাইক পেয়েছেন স্কটল্যান্ডের আইল অব আরান দ্বীপে বাসকারী ৩২ বছর বয়সী স্কট ইওয়ার্ট।
তিনি বলেন, ‘অনেকের কাছে এটি আরামদায়ক। ডিভাইসটি ব্যবহারকারীদের শৈশবের পাশাপাশি তুলনামূলক সহজ সময়গুলোর কথাও মনে করিয়ে দেয়। এত সহজ ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ায় আমার বেশ ফুরফুরে লাগে। পুরনো ক্যামেরায় ভালো ছবি তোলার জন্য বা এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। কেননা এখন যে স্মার্টফোনই কেনা হোক না কেন সেটি দিয়ে খারাপ ছবি তোলা অসম্ভব। মা-বাবার কাছে থাকা বিভিন্ন পুরনো ক্যামেরা খোঁজার মাধ্যমে এ কাজ শুরু করে স্কট। দ্রুতই তার সংগ্রহের তালিকা ৩০-এর ঘর পেরিয়েছে।
বিবিসিকে দেয়া বিবৃতিতে ই-কমার্স সাইট ইবে ইউকে জানায়, ২০২২ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে অধিবাসীদের মধ্যে ডিজিটাল ক্যামেরা খোঁজার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মধ্যে সার্চ ট্রাফিকিংয়ে ভিনটেজ ডিজিটাল ক্যামেরা এবং রিফারবিশড ক্যামেরা শব্দের ব্যবহার যথাক্রমে ১৩ ও ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
হাতে তৈরি ও পুরনো সামগ্রী বিক্রির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত মার্কেটপ্লেস ইটসিও গত ছয় মাসে ভালো পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। বর্তমানে সাইটটিতে ডিজিটাল ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট ১৯ হাজার সামগ্রী তালিকাভুক্ত আছে। অন্যদিকে ব্রুকলিনের ২৫ বছর বয়সী বাসিন্দা কেটি গ্লাসগো নিজেকে জেনারেশন জির সম্ভাব্য সবচেয়ে পুরনো সদস্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এখনো ছবি ও ভিডিও ধারণের জন্য তার বাবা-মার পুরনো ডিভাইস ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, যেসব তরুণের কাছে ২০ শতকের জনপ্রিয় ক্যামেরাগুলোর কোনো ভার্চুয়াল সংগ্রহ নেই, তাদের ডিজিটাল ক্যামেরা এক ধরনের নস্টালজিক পৃথিবীর অনুভূতি দেয়।
উই আর সোশ্যাল ক্রিয়েটিভ এজেন্সির গবেষণা প্রধান পল গ্রিনউড বলেন, ‘এটি একটি প্রাকৃতিক চক্র, যেখানে লোকজনের বয়স ২০-এর ঘর অতিক্রম করলে তারা নিজেদের তারুণ্যের সাংস্কৃতিক স্পর্শ পেতে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে অস্বস্তি বোধ করার কারণে তারা স্বস্তি পেতে চায়। একে তুলনামূলক বাস্তব ও প্রকৃত হিসেবে দেখা হয়। কারণ, তুলনামূলক অস্পষ্ট ধরনের কনটেন্টে আপনার কাছে সাধারণত সত্যতা ও বাস্তবতা ফুটে ওঠে। এটিই খুঁজে দেখছে জেনারেশন জি।’