মাত্র ২২ বছর বয়সে টিকটকে তার অনুসারীর সংখ্যা ১৪৯.৫ মিলিয়ন। গত জুনেই চার্লি ডি’অ্যামেলিওকে পেছনে ফেলে শীর্ষ টিকটকার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তিনি।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে সবচেয়ে বেশি অনুসারী আছে যে ব্যক্তিটির, তার নাম খাবি লেম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যারা ব্যবহার করেন, খাবি লেম তাদের কাছে অতি পরিচিত। তার নানা ভিডিও ক্লিপ, ছবি, মিম প্রতিনিয়তই নেটিজেনদের চোখে পড়ে। মাত্র ২২ বছর বয়সে টিকটকে তার অনুসারীর সংখ্যা ১৪৯.৫ মিলিয়ন। গত জুনেই চার্লি ডি’অ্যামেলিওকে পেছনে ফেলে শীর্ষ টিকটকার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তিনি।
কিন্তু জনপ্রিয় এই টিকটকারের প্রতি পোস্টে আয় কত তা কী আপনি জানেন? সম্প্রতি ফরচুন-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে খাবি কেম জানিয়েছেন, টিকটকে প্রতি পোস্টের মাধ্যমে তিনি ৭৫০০০০ ডলার আয় করেন। অর্থাৎ প্রতি মাসেই খাবি লেম মাল্টিমিলিয়ন ডলারের মালিক হচ্ছেন!
খাবি লেম জানিয়েছেন, তার বেশিরভাগ আয় আসে অনলাইন কন্টেন্ট আকারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে চুক্তির মাধ্যমে। যেকোনো ব্র্যান্ডের জন্য টিকটকে একটি ক্লিপ পোস্ট করার মাধ্যমে গড়ে ৪০০০০০ ডলার আয় করেন এই তারকা!
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, খাবি লেমের বেশিরভাগ ভিডিওতেই তিনি কোনো কথা বলেন না। কিন্তু নিজের অঙ্গভঙ্গি ও অন্যান্য বার্তার মাধ্যমে দর্শকদের ব্যাপক আনন্দ দিয়ে থাকেন তিনি।
খাবি লেমের পোস্ট করা সাম্প্রতিক একটি ভিডিও ১১ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে, যেখানে লেম অন্য একজনের পোস্ট করা ম্যাজিক কার্ড ট্রিকের কথা উল্লেখ করে বলছেন, এটা তো খুবই সোজা। কিন্তু খাবি লেম নিজেও অন্যদের বিভিন্ন ট্রিকসকে আরও রহস্যময় করে তুলে ভিডিও বানিয়েছেন এবং অন্যদের ভিডিও নিয়ে ঠাট্টা করে বানানো ভিডিওতেও লাখ লাখ ভিউ পেয়েছেন তিনি।
যদিও খাবি লেমের অধিকাংশ ভিডিওই হয় নিঃশব্দ, কিন্তু সম্প্রতি এই সেনেগালিজ অভিবাসী টিকটকার ইংরেজি ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন তিন ঘন্টা সময় ইংরেজি শেখার পেছনে ব্যয় করেন তিনি। বাড়িতে শিক্ষক রেখে এক ঘন্টা ইংরেজি চর্চা তো করছেনই, এর পাশাপাশি আমেরিকান কার্টুন, সিনেমাও দেখছেন প্রতিদিন। ফরচুন’কে খাবি লেম জানান, কোনো একদিন অস্কার জয়ের স্বপ্ন দেখেন তিনি।
কিন্তু ইংরেজি বলতে না পারা তার সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইন্টারনেটে খ্যাতিলাভের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ টাকা পকেটে পুরেছেন তিনি।
টিকটকে জনপ্রিয়তা পাওয়ার ফলে র্যা পার স্নুপ ডগ, অভিনেতা ইদ্রিস এলবা এবং সঙ্গীতশিল্পী জেসন দেরুলোর সাথে এক কাতারে চলে এসেছেন খাবি লেম। এমনকি বিখ্যাত ব্র্যান্ড ‘হুগো বস’ মিলান ফ্যাশন উইকে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য চুক্তি করেছিল খাবি লেমের সাথে। এর বিনিময়ে তাকে ৪৫০০০০ ডলার দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফরচুন আরও জানিয়েছে, হলিউডের একটি প্রধান স্টুডিও শুধুমাত্র একটি টিকটক ভিডিওর জন্য খাবি লেমকে ৭৫০০০০ ডলার প্রদান করেছে!
কিন্তু জীবনের শুরু থেকেই এমন বিলাসিতার সুযোগ পাননি খাবি লেম। সেনেগালের দাকার থেকে বাবা-মা ও ভাইবোনের সাথে ২০০১ সালে ইতালির তুরিনের শহরতলী এলাকা, চিভাসোতে অভিবাসিত হন খাবি লেম। হাইস্কুল পাশ করার পর মহামারির হানার আগপর্যন্ত একটি কারখানায় কাজ করতেন লেম। কিন্তু মহামারি আঘাত হানার পর তার চাকরি চলে যায়।
২০২০ সালে স্রেফ শখের বসে টিকটকে যোগ দেন খাবি লেম। কিন্তু পরবর্তীতে এটিই হয়ে ওঠে তার জীবিকা উপার্জনের উপায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টিকটকে লাখ লাখ অনুসারী তৈরি হয় তার এবং দুই বছরের মধ্যে শীর্ষ টিকটকার হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
তবে খাবি লেম স্বীকার করেন, তার এই খ্যাতি হয়তো খুব বেশিদিন নাও থাকতে পারে। কারণ ইন্টারনেটে প্রতিনিয়ত ব্যবহারকারীদের আগ্রহের পরিবর্তন হয় এবং একসময় তার অনুসারীর সংখ্যা কমেও যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে, স্মার্টফোনের স্ক্রিনের বাইরে বেরিয়ে আরও বড় পর্দায় জায়গা করে নিতে চাইছেন লেম।