স্মার্টফোনের বাজারে সাশ্রয়ীমূল্যে ডিভাইস সরবরাহের দিক থেকে শাওমি অন্যতম। বিশেষ করে এশিয়ার দেশ ভারতে প্রতিষ্ঠানটির বড় ধরনের ব্যবহারকারী রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে কারখানাও স্থাপন করেছে, কিন্তু দেশটিতে ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস বাজারজাতে শাওমি একেবারেই শ্লথগতিতে এগোচ্ছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজারে পুনরায় শীর্ষস্থান দখল করেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। বর্তমানে শাওমি পুনরায় হিস্যা বাড়াতে পরিকল্পনা পরিবর্তন করছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, চীনের প্রতিষ্ঠান শাওমি ১২০ ডলার বা ১০ হাজার রুপির কম ডিভাইস বাজারজাতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, কিন্তু ভারতের গ্রাহক আরো ভালো ডিজাইনের উন্নত ফিচারযুক্ত ডিভাইস ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ডিভাইস বাজারজাত করেছে। পাশাপাশি ডিভাইস কেনার জন্য সহজ ফাইন্যান্সিং স্কিম চালু করেছে। যে কারণে দেশটির ক্রেতাদের কাছে ডিভাইস সংগ্রহ আরো সহজ হয়েছে।
হংকংভিত্তিক কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, এসব উদ্যোগের কারণে ভারতের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে শাওমিকে হটিয়ে শীর্ষস্থান দখলে নিতে পেরেছে স্যামসাং। ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির বাজার হিস্যা ছিল ২০ শতাংশ। যেখানে শাওমির হিস্যা ছিল ১৮ শতাংশ।
কাউন্টারপয়েন্টের গবেষণা পরিচালক তরুণ পাঠক বলেন, ‘ভারতের বাজারে বর্তমানে প্রিমিয়ামাইজেশন চলছে। সেখানে সাশ্রয়ীমূল্যের ফোন বেশি থাকায় শাওমি এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না।’
চীনের পর স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ও বাজারের দিক থেকে ভারত দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। দেশটির স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬২ কোটি ৬০ লাখের বেশি। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে গ্রাহকের পছন্দের সঙ্গে তাল না মেলাতে পারলে যে শাস্তি পেতে হয় শাওমির শীর্ষস্থান হারানো তারই প্রমাণ। এ রকম আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে টাটা মোটরসের ন্যানো কার। ১ হাজার ২০০ ডলার বা ১ লাখ রুপিতে এ গাড়ি কেনা যেত এবং এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে সাশ্রয়ীমূল্যের গাড়ির আখ্যা দেয়া হয়। কম দামি হলেও গাড়ির মান ভালো না হওয়ায় গ্রাহক এর ব্যবহার থেকে সরে আসে।
ভিডিও দেখা থেকে শুরু করে কনটেন্ট তৈরিতে ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস ব্যবহারে ভারতীয়দের চাহিদা অন্যদের সুবিধার কারণ হবে। কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, বিশেষ করে মেটা ও আইফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপল বেশি লাভবান হবে। কেননা অ্যাপল মূলত বেশি দামের সেলফোন বাজারজাত করে থাকে। যেগুলোর দাম ৬০৫ ডলার থেকে ২ হাজার ৫০০ ডলারের কাছাকাছি। এ কারণে এত দিন ভারতে প্রতিষ্ঠানটির বাজার হিস্যা খুবই কম ছিল।
কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতে ১২০ ডলার মূল্যের স্মার্টফোনের বাজার হিস্যা ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে দুই বছর আগে এ হার ছিল ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে ৩০ হাজার রুপি বা ৩৬০ ডলারের বেশি দামের স্মার্টফোনের বাজার হিস্যা দ্বিগুণ বেড়ে ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শাওমি ও স্যামসাং দুটি প্রতিষ্ঠানই ভারতকে ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ানোর অন্যতম বাজার হিসেবে গণ্য করে থাকে। এখানে স্মার্টফোনই সবচেয়ে বেশি বিক্রীত পণ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে ৪৮০ কোটি ডলার আয় করেছে চীনের প্রতিষ্ঠান শাওমি। অন্যদিকে স্যামসাংয়ের আয় হয়েছে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৬৭০ কোটি ডলার স্মার্টফোন বিক্রির মাধ্যমে এসেছে।
শাওমির ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, গ্রাহক যে ধরনের ডিভাইস চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি সে রকম কিছু সরবরাহ করতে পারছে না। স্যামসাংয়ের ওয়েবসাইটে যেখানে ৩৬০ ডলারের বেশি মূল্যমানের ১৬টি ডিভাইস রয়েছে সেখানে শাওমি মাত্র ছয়টি ডিভাইস বাজারজাত করেছে। অন্যদিকে ১২০ ডলারের নিচে শাওমির ডিভাইস রয়েছে ৩৯টি। তবে এর অধিকাংশই স্টকে নেই। সেখানে স্যামসাং মাত্র সাতটি মডেল লিপিবদ্ধ করেছে।
কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে শাওমির মাত্র ১ শতাংশ স্মার্টফোন প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির ছিল। যেখানে স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ ক্যাটাগরির ডিভাইস বাজারজাত দ্বিগুণ বেড়ে ১৩ শতাংশ হয়েছে। তবে বর্তমানে শাওমি প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারজাতের মাধ্যমে পণ্যের লাইনআপে পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি নোট ১২ সিরিজ বাজারে আনে। এ সিরিজের ডিভাইসগুলোর সর্বোচ্চ মূল্য ৩০ হাজার রুপি। সম্প্রতি শাওমি ১৩ প্রোও বাজারে এসেছে। যার মূল্য ৭৯ হাজার ৯৯৯ রুপি বা ৯৭০ ডলার, যা ভারতের বাজারে সর্বোচ্চ। কৌশলগত এ পরিবর্তনের সুফলও দেখতে পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজারে আনার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে নোট ১২ সিরিজের বিক্রি ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।