সারি সারি সবুজ পাহাড় থেকে শুরু করে কলকল শব্দে বয়ে চলা ঝিরি, বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা অথবা নৃগোষ্ঠীদের অপরূপ নান্দনিক জীবনযাত্রা, সবকিছুতেই যেন বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য ঠিকরে পরে।
ঢাকার একজন ফ্রিল্যান্স ফটোজার্নালিস্ট ও ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফার হিসেবে আমার কাজ মানুষের জীবন ও জীবিকার অব্যক্ত কথাগুলো তুলে ধরা। ফটোগ্রাফার হিসেবে বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের গল্পগুলো ছবিতে তুলে ধরতে সম্প্রতি অপো’র সাথে কাজ করার সুযোগ হয় আমার। ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ, ইন পোর্ট্রেইট’ নামের এই ক্যাম্পেইনে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাই। সেই যাত্রাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে সেখান থেকে জীবনের না বলা বাস্তব গল্পগুলো তুলে ধরার সুযোগ আসে আমার সামনে।
এই যাত্রা থেকে আমার উপলব্ধি হয়, বাংলাদেশের সৌন্দর্য কেবল প্রকৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই উন্নয়নশীল দেশের মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা সেই সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। সারা দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার গল্পগুলো যেন অন্যরকম এক চিত্র তুলে ধরে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের অসাধারণ সেই গল্পগুলো যেন আমাদের সব মনোযোগ তাদের দিকে নিবদ্ধ করতে বাধ্য করে, ঠিক যেন আমাদের আগামীর প্রেরণা হিসেবে সামনে আসে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত ষাটগম্বুজ মসজিদের কথাই বলা যাক। বিস্তৃত প্রাকৃতিক পটভূমি আর সাগরপাড়ের মোহনীয় সৌন্দর্যের মধ্যে নানান রকম নৃগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। বাংলাদেশের দক্ষিণের ওই গ্রামগুলো প্রধানত কৃষি আর মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যেন এই জনপদে প্রকৃতি আর জীবিকা একাকার হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগ সময় নৌকায় আর মেঠোপথে গরুর গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায়।
এরপর আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী মানুষের জীবনের গল্পগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছি। এখনও তাদের নিয়মকানুন আর প্রাত্যহিক জীবনের সবজায়গায় কেমন যেন এক আদিম সরলতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। অসাধারণ গল্পগুলোর এমন দুর্লভ মুহূর্ত ক্যামেরায় ধারণ করতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছিল। আর এই আনন্দের ভাগীদার হিসেবে OPPO Reno8 T’র ১০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ধন্যবাদ প্রাপ্য। যাই হোক, ওই জনপদের বেশিরভাগ পরিবারই মাতৃপ্রধান, নারীরাই সেখানকার মূল কর্মক্ষম জনশক্তি। শান্তিপ্রিয়, আত্মনির্ভরশীল ও অতিথিপরায়ণ এই মানুষেরা এখনও সহজ-সরল জীবনযাপনে বিশ্বাস করে। আর তাদের হাতে করা কারুকাজের প্রশংসা আর নাইবা করলাম।
এরপর আমি দেশ নির্মাণে সরাসরি ভূমিকা রাখছে এমন মানুষদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাই। সেখানে আমি তাদের জীবনের ধাঁধাঁগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করতে চেষ্টা করি। দেশের আধুনিকায়নের পেছনের কারিগর এই ইটভাটার শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন। ইটভাটাগুলো ঘুরে দেখার সময় রত্না নামের একজনের গল্প আমাকে সত্যিই অভিভূত করে। পরিবারের আয়ের চাকা সচল রাখতে সারাদিন ইটভাটায় কাজ করার পর আবার রাতের স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। বাংলাদেশের যেকোনো ইটভাটা খুঁজে দেখলে এমন হাজারো রত্নার জীবনের গল্প উঠে আসবে।
রত্নার গল্প শোনার পর মাছের রাজ্য ঘুরে আসতে আমি গিয়েছিলাম কক্সবাজার। বাঙালি মাছ পছন্দ করে, আমিও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেকের কাছেই শুঁটকি মাছ খুব সুস্বাদু একটি খাবার। শুঁটকি মাছের দেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং এতো বড় বাজার শত শত পরিবারের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
কক্সবাজারের নাজিরার টেক এলাকার মুনিরা বেগম বলেন, “নাজিরার টেক এলাকার অনেকেই শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের সাথে জড়িত। এই খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এবং অনেক দরিদ্র গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে।” তিনি আরও বলেন, এটি তাদের পৈতৃক পেশা এবং কক্সবাজারের নাজিরার টেকের প্রায় ছয়টি পরিবার এখনও এ পেশার সঙ্গে জড়িত।
ছোটবেলা থেকেই পৈতৃক এই পেশার সঙ্গে জড়িত ৪৪ বছর বয়সী আমেনা বিবি বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুঁটকির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যবসা থেকে লাভের পরিমাণ বেড়েছে।”
এমন সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি বাংলাদেশে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। সুন্দরবন আমাদের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বহু সংখ্যক বন্যপ্রাণী, মাছ, অসংখ্য প্রজাতির পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণীর আবাসস্থল। সুন্দরবনে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সম্পদে ভরপুর।
সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার পর, আমি যশোর জেলার গদখালী এলাকায় অবস্থিত একটি অনিন্দ্য সুন্দর ফুলের বাগানের সন্ধান পাই। গাঁদা, কসমস, গোলাপ, রজনীগন্ধা ও চন্দ্রমল্লিকা সহ বিভিন্ন ফুলের সুঘ্রাণ আমাকে বিমোহিত করে, নিয়ে যায় অন্য পৃথিবীতে। যশোরের পঁয়ত্রিশ গ্রাম জুড়ে ৬২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৪২ জাতের দেশি-বিদেশি ফুলের চাষ হয়। আমি এই ফুলের সৌন্দর্য ক্যাপচার করেছি ৪০x মাইক্রোলেন্সের সাহায্যে, যার ফলে ফুলের পাপড়ি সহ প্রতিটি অংশের গঠন ও সৌন্দর্য খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠে OPPO Reno8 T ফোনের ক্যামেরায়। OPPO Reno8 T ফোন দিয়ে এমন এক জায়গার ছবি তোলার অভিজ্ঞতা ছিল এক কথায় দারুণ।
অপো গ্যালারি একটি অসাধারণ ক্যাম্পেইন। এই ক্যাম্পেইনের কারণে আমি OPPO Reno8 T’র লেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের সত্যিকারের সৌন্দর্য ও এই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যকে ক্যামেরায় ফুটিয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি। এই যাত্রায় যাদের সাথে দেখা হয়েছে তাদের উষ্ণতা ও ভালবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই যাত্রার সময় তোলা ছবিগুলো নিছক ছবি নয়, বরং জীবনের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্তের প্রতিফলন। আর এই দুর্দান্ত ছবিগুলো তোলা সম্ভব হয়েছে OPPO Reno8 T ফোনের অনবদ্য ক্যামেরা সেটআপের জন্য, যে ক্যামেরা দিয়ে তোলা প্রতিটি ছবি যেন ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ, ইন পোর্ট্রেট’, রঙের তুলি দিয়ে আঁকা গল্প।