উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের জন্য জাতীয় সম্মান হিসেবে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ)। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (আইডিয়া) কর্তৃক ২০১৯ সাল থেকে দেশের উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের জন্য সর্ববৃহৎ এই উদ্যোগ ‘বিগ’ আয়োজন করা হচ্ছে। এরই আলোকে এ বছর বিগ ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৮ মার্চ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটরিয়ামে আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো. আলতাফ হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দেশের সমস্যাগুলোর প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান দিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় তরুণ উদ্ভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের তরুণদের মেধার ঘাটতি নেই, তাদের প্রয়োজন সহযোগিতা। বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টের মাধ্যমে আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি। আমাদের তরুণ উদ্ভাবকেরা শুধু দেশের নয় বিশ্বের সমস্যাও সমাধান করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য আমরা আইডিয়া প্রকল্প চালু ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছি। এ প্রতিষ্ঠান সমূহের মাধ্যমে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে। পাশাপাশি আগামীতে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় হাবে পরিণত হবে।
তিনি আরো বলেন ভারত-সিঙ্গাপুরের মধ্য থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোকে ৮০০ মিলিয়নের ওপর বিনিয়োগ এসেছে। স্টার্টআপ ধীরে ধীরে ওঠে না। রকেটের গতিতে ওঠে। বিকাশ, নগদ ও শপআপ এরই মধ্যে বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন যে তরুণদের সংখ্যায় বিশ্বের মধ্যে আমরা এগিয়ে রয়েছি। একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে তরুণদের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, বিগ অনুদান পেয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সোপান বা পদক্ষেপ তৈরি করতে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এই ইনোভেশন গ্র্যান্ট এর মাধ্যমে যারা বিজয়ী হবেন তারা আমাদের দেশকে তাদের নতুন উদ্ভাবন এর মাধ্যমে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলেও তিনি আশা ব্যাক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিগ ২০২৩- এর মূখ্য সমন্বয়ক ও আইডিয়া প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক সিদ্ধার্থ গোস্বামী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে ২৮ মার্চ মঙ্গলবার থেকে বিগ ২০২৩-এর নির্ধারিত ওয়েবসাইট (www.big.gov.bd) ভিজিট করে নিবন্ধন করা যাবে। জাতীয় পর্যায়ে ২২ এপ্রিল শনিবারের মধ্যে যেকোন তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্যোক্তা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন।
bigআবেদনসমূহের মধ্য থেকে ৩০০টি উদ্ভাবনী স্টার্টআপকে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিগ কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীতে, নির্বাচিত সেরা স্টার্টআপদের নিয়ে একটি ৩ দিনব্যাপী বুটক্যাম্প আয়োজন করা হবে। এ বুটক্যাম্পে স্টার্টআপদের নিয়ে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ, মেন্টরিং, পিচিং ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বুটক্যাম্পের সেরা স্টার্টআপদের থেকে নির্বাচন করা হবে বিগ ২০২৩ এর সেরা ৫১ স্টার্টআপ যাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত সেরা ৫টি স্টার্টআপকে নিয়ে আয়োজিত হবে বিগ-এর চূড়ান্ত রাউন্ড। এই চূড়ান্ত পর্ব থেকে অভিজ্ঞ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিলেকশন প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে বৃহৎ এই আয়োজনের চূড়ান্ত ফলাফল।
‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২৩’ এর পুরস্কার হিসেবে সেরা একটি স্টার্টআপকে দেওয়া হবে বিশেষ সম্মাননা এবং গ্র্যান্ট হিসেবে ১ কোটি টাকা অনুদান। বাকি নির্বাচিত তালিকার সেরা ৫০ স্টার্টআপ এর প্রত্যেককে দেওয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা করে অনুদান। এছাড়া, স্টার্টআপদের জন্য রয়েছে বিনিয়োগ পাবার সুবিধাসহ নানা সুযোগ। অর্থাৎ সেরা ৫১টি স্টার্টআপকে মোট ৬ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, বিগ ২০২৩ এর সেরা ৫১টি স্টার্টআপকেই দেওয়া হবে বিশেষ সম্মাননা সনদ।