টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী পানিনির্ভর ব্যাটারি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। ব্যাটারিগুলো ধাতবমুক্ত, যা শক্তি সঞ্চয় সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে সাহায্য করে। জলীয় ব্যাটারি নামেও পরিচিত এই নতুন উদ্ভাবন। এসব ব্যাটারি একটি করে ক্যাথোড, ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড; অ্যানোড, ধনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড এবং একটি ইলেকট্রোলাইট নিয়ে গঠিত। বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) ও টেকসই জ্বালানি প্রযুক্তির তথ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ইলেকট্রেক বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এ উদ্ভাবনের তথ্য জানিয়েছে।
পানিনির্ভর ব্যাটারির বিশেষত্ত্ব, এর মধ্যে থাকা পলিমার ক্যাথোড ও অ্যানোডগুলো। এগুলো জ্বালানি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। এছাড়া ইলেকট্রোলাইট হিসেবে ব্যবহার হয় অর্গানিক সল্টের সঙ্গে মিশ্রিত জল। হাই ভোল্টেজ ডিসচার্জ এবং পলিমারের দ্রুতগতির রেডক্সের কারণে জলভিত্তিক ব্যাটারি উদ্ভাবনে ইলেকট্রোডগুলোকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছে বিজ্ঞানীরা। তবে জলীয় পরিবেশে পলিমারগুলোর জ্বালানি সঞ্চয় করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। ইলেকট্রন, আয়ন ও জলের অণুর একযোগে স্থানান্তরের কারণে এর প্রতিক্রিয়া জটিল এবং সমাধান করাও বেশ কঠিন মনে করা হচ্ছে।
যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে এ ধরনের ব্যাটারি ভবিষ্যতে লিথিয়াম ও কোবাল্টের মতো ধাতবের সম্ভাব্য ঘাটতি মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে। ব্যাটারিতে আগুন ধরার সম্ভাবনাও দূর করতে পারে নতুন এ প্রযুক্তি। পানিনির্ভর ব্যাটারির আরেকটি সুবিধা হলো যখন দাম বাড়বে, তখন এটি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির বিকল্প হতে পারে। ব্যাটারি উৎপাদনের বিকল্প সরঞ্জাম খাতটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। পানিনির্ভর ব্যাটারি, জলীয় ব্যাটারি নামেও পরিচিত। এ ধরনের ব্যাটারিতে প্রচলিত অর্গানিক ইলেকট্রোলাইটের পরিবর্তে জলভিত্তিক ইলেকট্রোলাইট ব্যবহার করা হয়। এটি প্রচলিত ব্যাটারির তুলনায় নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। এ ব্যাটারির অন্যতম প্রধান সুবিধা, এটি প্রচলতি ব্যাটারির তুলনায় কম দাহ্য। নিরাপত্তা প্রশ্নে একজন ক্রেতার কাছে ইলেকট্রনিকস, ইভি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে এ ধরনের ব্যাটারির ব্যবহার গুরুত্ব পাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
পানিনির্ভর ব্যাটারিগুলো প্রচলিত প্রযুক্তির ব্যাটারির তুলনায় আরো টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। এগুলো বিষমুক্ত এবং এর উৎপাদনে ব্যবহৃত জিঙ্ক, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজের মতো উপাদানগুলো প্রাচুর্যতা রয়েছে। এসব উপাদান যেমন সহজলভ্য, তেমনি এগুলোর পুনর্ব্যবহারও সহজ। আরেকটি বিষয় হলো এতে বিষাক্ত রাসায়নিক বা ভারী ধাতব না থাকায় এগুলো ডিসপোজাল বা নিস্ক্রিয় করাও নিরাপদ।
নিরাপত্তা ও টেকসই সুবিধার পাশাপাশি জলভিত্তিক ব্যাটারিগুলো প্রচলিত ব্যাটারির তুলনায় সাশ্রয়ী। এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনও কম। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহারের পাশাপাশি এর সামগ্রিক ব্যয়ও কমে যায়। তবে পানিনির্ভর ব্যাটারির কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রচলিত ব্যাটারির তুলনায় কম জ্বালানি বা শক্তি ধারণ এবং পাওয়ার ক্যাপাসিটিও কম। ফলে হাই-ভোল্টেজ যন্ত্রাংশে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। এসব ব্যাটারিতে তুলনামূলক বড় ও ভারী উপাদানের প্রয়োজন হয়। পোর্টেবল বা বহনযোগ্য ডিভাইসে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যা প্রতিবন্ধক হতে পারে।