রোবোটিকস ও অটোমেশনের উন্নয়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। যদিও দক্ষতা বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তারকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। কিন্তু এ প্রযুক্তির বিস্তারই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সংকুচিত করে ফেলবে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ চাকরি হারাবে অথবা কাজের ধরন পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এক গবেষণায় এমন একটি ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছে। খবর ইন্ডাস্ট্রিওয়্যার্ড।
প্রযুক্তির আগমনে চাকরি হারানোর একটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের লিফট অপারেটর পদের চাকরি। ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি অনুযায়ী এ পদে নিবন্ধিত কর্মীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৯৭ হাজার জন। বর্তমানে পদটির কোনো অস্তিত্ব নেই। একইভাবে বিশেষ করে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে এখন আর কর্মীদের উপস্থিতি অপরিহার্য নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চ্যাটবট ব্যবহার করছে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) গত বছর প্রকাশিত এক গবেষণায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছে। ওই গবেষণা মতে, প্রযুক্তির ব্যবহার ৩২টি দেশের ১৪ শতাংশ কর্মক্ষেত্র মারাত্মকভাবে অরক্ষিত করে ফেলেছে। যেখানে এসব খাতে অটোমেশনের সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ। এছাড়া আরো ৩২ শতাংশ কর্মক্ষেত্র কিছুটা কম ধাক্কা খাবে, যেখানে এসব খাতে অটোমেশনের সম্ভাবনা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। বর্তমান কর্মসংস্থান হার বিবেচনায় এই ৩২টি দেশের ২১ কোটি কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে গবেষকদের পর্যবেক্ষণে, ডিজিটাল প্রযুক্তি শুধু মানুষের কর্মসংস্থানে ভাগ বসাবে এমনটিই নয়, এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন: এ প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, পাশাপাশি আগামী ছয় বছরের মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে। অর্থাৎ প্রযুক্তি যত কর্মসংস্থান ধ্বংস করবে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে নতুন কর্মক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাকরি হারানো বা কর্মক্ষেত্র পরিবর্তিত হওয়া এক কোটি থেকে সাড়ে চার কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য পুনঃপ্রশিক্ষণ ও পুনর্নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়বে বলে উল্লেখ করছেন গবেষকরা।
প্রযুক্তি খাতে যুক্ত জনগোষ্ঠী বর্তমান দক্ষতা নিয়ে ভবিষ্যতে কতটা টিকে থাকতে পারবে, এ নিয়ে প্রযুক্তি শিল্পের হর্তাকর্তারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এর জবাবে গবেষণা প্রতিবেদনে অবশ্য আশার কথাই বেশি বলা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কোর ডিজিটাল সেক্টর যেমন: তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), সফটওয়্যার, বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল কমিউনিকেশন, ইলেকট্রনিকস ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়বে। ২০১৫ সাল নাগাদ এ শিল্পগুলো জিডিপিতে অতিরিক্ত ৪৩ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অবদান রাখতে পারবে।
তবে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগাতে হলে আগাম কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাইলে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। দক্ষতা ও যোগ্যতা উন্নয়ন খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে দরকার পড়বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ডিজিটাল অবকাঠামো এবং পাবলিক ডাটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে কাজ করা।
এছাড়া এ পরিবর্তন থেকে লাভবান হতে চাইলে নতুন স্টার্টআপ উদ্ভাবন, বিদ্যমানগুলোর বিস্তৃতির জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টিতে নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন হবে, যাতে লোকজনকে পুনঃপ্রশিক্ষণে সহযোগিতা করা যায়।
গবেষকরা আরো বলছেন, এক্ষেত্রে ব্যক্তিপর্যায়েও সচেতনতা দরকার। ডিজিটাল অর্থনীতি তাদের কর্মক্ষেত্রকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং সামনে কোন ধরনের পরিবর্তন আসছে— এ ব্যাপারে প্রত্যেককে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
এদিকে গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে প্রযুক্তির বাইরে বিভিন্ন খাতও ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। টাকার অংকে যা দাঁড়াবে ১৫ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে কৃষি, শিক্ষা, জ্বালানি, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, লজিস্টিক ও খুচরা পণ্য বিক্রয় খাত অন্যতম।