ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রার ভূমিকা, বৈশ্বিক চর্চা ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন এবং দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী কী কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন এসব বিষয় নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অন বিজনেস এন্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরবিডি) সহযোগিতায় ১৬ এপ্রিল ব্যবসা অনুষদের আব্দুল্লাহ ফারুক সম্মেলন কেন্দ্রে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই-এর ফিনল্যাব বিডি।
ঢাবির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অন বিসনেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (সিপিআরবিডি) পরিচালক অধ্যাপক আবু হেনা রেজা হাসানের সভাপতিত্বে এ আয়োজনের স্বাগত বক্তব্য রাখেন এটুআই এর ডিজিটাল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস স্পেশালিস্ট মো. তহুরুল হাসান।
অনুষ্ঠানে ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যাকগ্রাউন্ড গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাবির আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া।
গবেষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সিবিডিসি-এর বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা, কৌশলগত দিক এবং ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনে ডিজিটাল মুদ্রার ভূমিকা, কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে এবং বাস্তবায়নের পর কী ধরনের বাধা তৈরি হতে পারে সেবসব বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে গবেষক সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, আমাদের এই রিসার্সটা মূলত ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্স। এখানে সিবিডিসি কী, বৈশ্বিক পর্যায়ে এর কার্যক্রম কী এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনা কেমন রয়েছে সেটিই দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। পৃথিবীতে ১১৫ টি দেশ সিবিডিসি নিয়ে কাজ করছে। তার মধ্যে ১১ টা দেশ ইতোমধ্যে লঞ্চ করেছে। কেউ কেউ রিসার্স করছে, কেউ কেউ পাইলটিং করছে। কেউ কেউ ফুল কার্যক্রম চালু করার প্রক্রিয়ায় আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এ বিষয়টি সামনে আলোচনায় আসছে।
তিনি আরও বলেন, হয়তো একসময় সিবিডিসি ইস্যু হবে বাংলাদেশে। তবে সেই পথটা অনেক দূরে। এই মুহূর্ত ডিজিটাল মানির একটা ইকোসিস্টেম দাঁড়িয়েছে তাতে সিবিডিসির প্রয়োজন নাই। বাস্তবায়নের কথা প্রায়োরিটির দরকার নাই। দেশে মোবাইল ফাইনান্সিয়াল ব্যাংকিং যে সিস্টেম আছে সেটাই আরও উন্নত করা প্রয়োজন নাগরিকদের সেবা পূরণ করতে।
‘জনতার পর্যায়ে ডিজিটাল মুদ্রা চিন্তা করা হলে অনেকগুলো সতর্কতা মেনে এগোতে হবে। ডিজিটাল মুদ্রা ইস্যু হলে ব্যাংকিং সেক্টরে ইমপ্যাক্ট পড়ার শঙ্কা রয়েছে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির হওয়া শঙ্কা রয়েছে, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে, ট্রান্সপেরেন্সির বিষয় আছে, তথ্যগত নিরাপত্তার ইস্যু আছে। অনেক দেশেই এর ঝুঁকি পরিলক্ষিত হয়েছে’। বলেন এ গবেষক।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এমএফএস ব্যবস্থা একটা ভালো অবস্থানে আছে। যার মধ্য দিয়ে দেশের নাগরিকরা ডিজিটাল ব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি সকল পেমেন্ট করছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পথে ক্যাশলেস সোসাইটি গঠন করা জরুরি। এক্ষেত্রে ডিজিটাল মুদ্রা অবদান রাখার সুযোগ আছে। তবে সেজন্য অর্থনৈতিক পরিবেশের সেরকম পরিস্থিতি থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে বর্তমানে চালু থাকা ডিজিটাল মানি ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার সুযোগ আছে। তবে সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে দেশে সিবিডিসি চালুর ক্ষেত্রে পাইলটিং করা যেতে পারে। তা করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়া-উল-হক, আলম, ঢাবির আন্তর্জাতিক বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনসহ ব্যাংক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।