চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধ অন্যদিকে চিপের জন্য এশিয়ানির্ভরতা কাটাতে অনেক দেশ এ খাতে বিনিয়োগ করছে। এর অংশ হিসেবে এবার যুক্তরাজ্য নিজেদের চিপ খাতকে শক্তিশালী করতে ১০০ কোটি পাউন্ড বা ১২০ কোটি ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
একই খাতের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে বিনিয়োগ করেছে বা উদ্যোগ নিয়েছে তার তুলনায় যুক্তরাজ্যের এ প্রকল্প খুবই ছোট। তবে এটি সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে গবেষণা ও উন্নয়ন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি তৈরির বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি নির্দেশ করে।
যুক্তরাজ্য সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এবং আগামী দশকের মধ্যে এ বিনিয়োগ সম্পন্ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে ২০২৩-২৫ সালের মধ্যে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এ প্রকল্পের বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানান, গবেষণা ও ডিজাইনের উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের যে সক্ষমতা রয়েছে সে বিষয়টিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে নতুন প্রকল্প। এর মাধ্যমে বিশ্ববাজারে চলমান প্রতিযোগিতায় যুক্ত হওয়া যাবে।
কভিড-১৯ মহামারীর সময় সরবরাহ চেইনে যে সমস্যা হয়েছিল সেটি সমাধানের জন্যও এ প্রকল্প বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরবরাহ সংকটের কারণে বৈশ্বিক চিপ বাজারের দুর্বল দিকগুলো প্রকাশ্যে আসে এবং পণ্য সরবরাহ কমে যায়। আধুনিক জীবনযাপনে সেমিকন্ডাক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভোক্তা ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে শুরু করে স্মার্টফোন, ওয়াশিং মেশিন, স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত মেশিন ও যোগাযোগের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ আধুনিক চিপ এশিয়ায় তৈরি হয়ে থাকে। বিশেষ করে তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। বিদেশী পণ্যের ওপর অধিক নির্ভরশীলতার কারণে যুক্তরাজ্যেও সরবরাহ সংকট তৈরি হয় এবং তা পণ্য বাজারজাতে প্রভাব ফেলে। চিপ সরবরাহ চেইনকে শক্তিশালী করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এ চুক্তির লক্ষ্য চিপ উৎপাদনের স্থিতিস্থাপকতা ও দক্ষতা বাড়ানো এবং একটি স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা।
অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চিপ উৎপাদনে শুধু এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গবেষণা, উন্নয়ন ও ডিজাইনে বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবন, বিদেশী সরবরাহের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ও আরো নিরাপদ চিপ সরবরাহ পরিবেশ তৈরি করাই মূল লক্ষ্য। অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ কম হলেও দেশটির সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সেমিকন্ডাক্টরের কৌশলগত গুরুত্বের বিষয়টিকে নির্দেশ করছে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে অংশগ্রহণের কথাও তুলে ধরছে।
জাপানে গ্রুপ অব সেভেন (জি৭) সম্মেলনে যোগ দেয়ার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এ ঘোষণা দেন। সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা ও প্রযুক্তি খাতের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জাপানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অংশীদারত্ব সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছে।