ভবিষ্যতে কর্মীদের পর্যবেক্ষণ বা নিয়োগের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি ‘নিউরোটেক’ ব্যবহার করতে পারবে নিয়োগদাতা সংস্থা বা কোম্পানি। তবে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্যের ইনফরমেশন কমিশনার অফিস (আইসিও)।
ডাটা ওয়াচডগ কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘নিউরোটেক’ যদি সঠিকভাবে বিকশিত ও ব্যবহার না করা হয় তাহলে এর মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টির বড় বিপদ লুকিয়ে রয়েছে। খবর বিবিসি।
নিউরোটেকনোলজি হচ্ছে ‘নিউরোডাটা’ অর্থাৎ মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের তথ্য নিয়ে গঠিত প্রথম আইসিও প্রতিবেদন। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তির মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যতের জন্য কয়েকটি অনুমাননির্ভর ফল তৈরিতে সহায়তা করে থাকে এ প্রযুক্তি। বর্তমানে এ প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন ধনকুবের ইলোন মাস্কের নিউরালিংকের মতো কোম্পানিগুলো কম্পিউটারকে মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত করার নতুন উপায় খুঁজছে।
আইসিওর স্টিফেন অ্যালমন্ড বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা যেসব সূচক দেখছি তার ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ এবং এ খাতে তৈরি করা পেটেন্ট উভয় ক্ষেত্রেই বেশ দ্রুত উন্নতি দেখতে পাচ্ছি।’ আইসিও বলছে, নিউরোটেক এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবহার হচ্ছে। এতে যদিও কঠোর নিয়মকানুন রয়েছে। ১২ বছর আগে সাইকেল দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া গার্ট-জ্যান ওস্কাম নামের একজনের মস্তিষ্কে ইলেকট্রনিক ইমপ্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ ক্রমেই বাড়ছে।
ইলোন মাস্কের ‘নিউরালিংক’ মানব মস্তিষ্কে এ প্রযুক্তি পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। এখন এ প্রযুক্তির ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি ডলার বা ৪০০ কোটি পাউন্ড। যদিও এটি এখনো বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু করেনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও (এআই) ধারাবাহিকভাবে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। গবেষণা প্রকল্পগুলো এখন শুধু মানব মস্তিষ্ক স্ক্যানের মাধ্যমে বাক্য এবং শব্দগুলো উদ্ধার করতে পারে। লক-ইন সিন্ড্রোম রোগী অর্থাৎ চেতনাবোধ আছে কিন্তু চলাফেরা বা কথা বলতে পারে না—এমন ক্ষেত্রে এটি সহযোগিতা করতে পারছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি আরো উন্নত হয়ে আবির্ভূত হতে পারে। নির্মাতারা মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করার আরো ভালো উপায় খুঁজছে।
আইসিওর তথ্য বলছে, চার-পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মীদের তথ্য ট্র্যাকিংয়ের বিষয়টি সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, উৎপাদনশীলতা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে এর প্রয়োগ করা যেতে পারে।
স্টিফেন অ্যালমন্ড মনে করেন, হেলমেট বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কর্মচারীর মনোযোগ এবং ফোকাস পরিমাপ করা যাবে এর মাধ্যমে। এভাবে মূল্যায়ন করা যাবে, কর্মক্ষেত্রের চাপের প্রতি কর্মীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশের মাত্রা এবং চাপের মাত্রা পরিমাপ করে ব্রেইন মনিটরিং ডিভাইস ব্যবহার করা যেতে পারে।
এরই মধ্যে স্বল্প পরিসরে ও নিয়ন্ত্রিত গবেষণায় ‘নিউরোমার্কেটিং’-এর ব্যবহার হয়েছে।