বিশ্বে দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে সেলুলার ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) সংযোগ। ২০২২ সালে বছরওয়ারি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০ কোটিতে। সমন্বিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বেড়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৬০০ কোটি সংযোগের রেকর্ড অতিক্রম করবে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল সেলুলার আইওটি কানেকশন ট্র্যাকার প্রতিবেদনে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ একটি বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন পণ্য পর্যালোচনা করে। প্রধান প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক কোম্পানি নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২২ সালের জরিপ অনুসারে, দুই-তৃতীয়াংশ সেলুলার সংযোগের হিস্যাই মূলত চীনের। পরবর্তী ধাপে আছে যথাক্রমে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা। যদিও সেলুলার সংযোগে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা, বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে সংকটের মতো কিছু প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে; তার পরও বেড়েছে সেলুলার আইওটি বাজার। আর তার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ছিল বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়া। বিশেষ করে স্মার্ট মিটার, অটোমোবাইল ও এসেট ট্র্যাকিং বর্তমানে নতুন প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। সেলুলার আইওটি যেহেতু শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদন বাড়ানো, সরবরাহ সময় কমিয়ে আনা ও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনায় সহযোগিতা করে। স্বাভাবিকভাবেই মহামারীর প্রাদুর্ভাবেও সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট সোমেন মণ্ডল জানিয়েছেন, ২০২২ সালের পর সেলুলার আইওটি সংযোগের ৯০ শতাংশই ফোরজি ও এনবি-আইওটির যৌথ হিস্যা। ২০১৬ সালে টুজি ও থ্রিজিভিত্তিক আইওটি সংযোগকে পেছনে ফেলতে সামনে আসে ফোরজি। বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে দ্রুত। এনবি-আইওটি বিপুল জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে চীনে। জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকায় রয়েছে এলটিই-এম প্রযুক্তির বিশেষ প্রভাব। ইউরোপ একই সঙ্গে এনবি-আইওটি ও এলটিই-এম প্রযুক্তির সমন্বয় করে নিয়েছে। তবে ফোরজি ক্যাট ১ বিস প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা এনবি-আইওটিকে ছাপিয়ে গেছে। বিশেষ করে কার্যক্রম পরিচালনা ও বিস্তৃতির দিক থেকে। পিওএস, টেলিম্যাটিকস ও স্মার্ট মিটার্সের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলো দ্রুত ফোরজি প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। ফোরজি ক্যাট ১ ও ফোরজি ক্যাট ১ বিস প্রযুক্তির চালান বেড়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়, যা এনবি-আইওটি প্রযুক্তির বাজারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
ফাইভজি এখনো বর্ধনশীল। বাজারে ফাউভজিভিত্তিক নতুন অ্যাপ ও পরিষেবা জন্ম নিচ্ছে। ফাইভজি রেডক্যাপ ও ফাইভজি ই-রেডক্যাপের উত্থান তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোয়। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট নেইল শাহ দাবি করেছেন, বৈশ্বিক সেলুলার আইওটি সংযোগ ২০৩০ সাল নাগাদ ৬০০ কোটি অতিক্রম করবে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। ডিজিটাল প্রযুক্তি, অটোমোটিভ, শিল্প-কারখানা, পাইকারি পরিষেবা ও স্বাস্থ্য খাতে বেড়েছে আইওটির ব্যবহার। গত দশকে ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও স্মার্টফোন সেলুলার কানেকশন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। চলতি দশকে সে ভূমিকা পালন করছে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এ বিস্তারের কারণে শিগগিরই হয়তো কমতে পারে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের দাম। বিশেষ করে সিগফক্স ও ওয়াই-সানের মতো নন-সেলুলার প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবে। গত বছর সেলুলার আইওটি শিল্প নানা পরিবর্তন দেখেছে। টেলিট অধিগ্রহণ করে নিয়েছে থ্যালিজের সেলুলার আইওটি ব্যবসা। পরিবর্তনকে সঙ্গে নিয়েই সেলুলার আইওটি বাজার ক্রমে স্ফীত হচ্ছে। নন-সেলুলার প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় শক্ত করে চলছে নিজের অবস্থান।