দ্বিতীয় প্রান্তিকের পরিচালন মুনাফা ৯৬ শতাংশ কমার কথা জানিয়েছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে চিপের দাম কমে যায়। এ অবস্থায় সরবরাহ কমালেও ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও পরিচালন মুনাফার এ হ্রাস পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। খবর রয়টার্স।
বিশ্বের বৃহত্তম মেমোরি চিপ ও স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি অনুমান করছে, এপ্রিল-জুন পর্যন্ত তাদের পরিচালন মুনাফা ৬০০ বিলিয়ন ওন বা ৪৫ কোটি ৯০ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। প্রাথমিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবৃতি অনুসারে এক বছর আগে যা ছিল ১৪ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ওন। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৫৯ হাজার কোটি ওনের পর যা স্যামসাংয়ের সর্বনিম্ন মুনাফা অর্জনের রেকর্ড।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক লেনদেনের সময় স্যামসাংয়ের শেয়ার মূল্য কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। সামগ্রিক বাজারে যা দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাসের রেকর্ড করেছে। ২৭ জুলাই বিস্তারিত আয়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে স্যামসাং। মেমোরি চিপের দাম পতন এবং ইনভেন্টরি মান কমায় জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি এর চিপ ব্যবসায় ৪ দশমিক ৫৮ ট্রিলিয়ন ওন ক্ষতির কথা জানায়। কিন্তু স্যামসাংয়ের কম্পিউটার, সেলফোন ও সার্ভারে ব্যবহৃত ডিআরএএম চিপের বিক্রি বাড়ায় মেমোরি চিপ ব্যবসায় দ্বিতীয় প্রান্তিকের লোকসান কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কোরিয়াভিত্তিক বিশেষায়িত পুঁজি বাজার প্রতিষ্ঠান ডাইশিন সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক পার্ক কাং হো বলেন, ‘মেমোরি চিপের দাম কমেছে, তবে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা না।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্যামসাং ইলেকট্রনিকস যখন সম্পূর্ণ আয়ের প্রতিবেদন ঘোষণা করবে, বিনিয়োগকারীরা তখন কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের কর্মসক্ষমতা সম্পর্কিত নির্দিষ্ট বিষয়গুলো যেমন—তৃতীয় প্রান্তিকে উৎপাদন হ্রাস কতটা প্রভাব ফেলবে, কোন ধরনের চাহিদা পুনরুদ্ধার হবে এবং উচ্চ ব্যান্ডউইথ মেমোরি (এইচবিএম) পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সম্ভব্য লাভের বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখবেন।’
মেমোরি চিপ মন্দার সময়, বাজারে চাহিদা ও অতিরিক্ত সরবরাহ কমার ফলে দাম কমে যায়। ফলে চিপ নির্মাতাদের লাভের পরিমাণও বাধাগ্রস্ত হয়। এ মন্দা পরিস্থিতি চলমান, যা মেমোরি চিপ শিল্পের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের মতো কোম্পানিগুলোকে প্রভাবিত করছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে গত বছর শুরু হওয়া মেমোরি চিপ মন্দা চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
হুন্দাই মোটর সিকিউরিটিজের গবেষণাপ্রধান গ্রেগ রোহ বলেন, ‘চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিক থেকে ডির্যাম মেমোরির দাম বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে প্রত্যেক প্রান্তিকে দুই অংক বৃদ্ধি পেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্যামসাং তার অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় ভিন্ন। তাই চলতি বছর মেমরি চিপে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ বজায় রাখবে বলে আশা করা যায়।’
স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এপ্রিল-জুনে প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব সম্ভবত এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ কমে ৬০ ট্রিলিয়ন ওন হয়েছে।
চলতি মাসের শেষের দিকে সিওলে স্যামসাংয়ের ফোল্ডেবল স্মার্টফোন উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগের ঘোষিত সময়ের চেয়ে সপ্তাহখানেক আগেই নতুন পণ্যটি উন্মোচন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিযোগী অ্যাপলের নতুন আইফোন বাজারে আসার আগেই স্যামসাংয়ের এ পদক্ষেপকে বিশ্লেষকরা প্রিমিয়াম সেলফোনের বাজারে আধিপত্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।