বছর চার আগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে চীনের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। তবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ফাইভজি প্রযুক্তির বাজারে ফিরতে আগ্রহী তারা। হুয়াওয়ের এ প্রত্যাবর্তনকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তিনটি গবেষণা সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (এসএমআইসি) থেকে চিপমেকিংসহ সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন টুলে নিজস্ব অগ্রগতি ব্যবহার করে হুয়াওয়ের অভ্যন্তরীণভাবে চিপ তৈরিতে সক্ষম হওয়া উচিত। যদিও গ্রাহকদের সঙ্গে গোপনীয়তা বিষয়ক শর্তের কারণে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি। এদিকে হুয়াওয়ে এ বিষয়ে রয়টার্সকে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। এছাড়া এসএমআইসিকে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও তারা কোনো জবাব দেয়নি।
জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে অন্য পশ্চিমা দেশগুলো ফাইভজি প্রযুক্তিতে হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি আরো কিছু নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে তারা। এরপর থেকে ধুঁকতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালে হুয়াওয়ের ভোক্তা ব্যবসা বাবদ আয় হয়েছিল ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে তা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে যায়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পরবর্তী তিন বছর তারা কোনোমতে টিকে থাকার লড়াই করেছে।
স্মার্টফোন তৈরিতে একটা সময় হুয়াওয়ে রীতিমতো অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করত। তবে ২০১৯ সালের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের চিপ ক্রয় বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর মজুদকৃত চিপ ব্যবহার করে নামমাত্র কিছু স্মার্টফোন তৈরি করে। তবে ফোরজি প্রযুক্তির স্মার্টফোন বিক্রির কারণে গত বছর বিশ্বের অধিকাংশ র্যাংকিং থেকেই বাদ পড়ে যায়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের বাজারে হুয়াওয়ের হিস্যা ১০ শতাংশের মতো। যদিও ২০১৯ সালে হুয়াওয়ে বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারজাত করেছে।
পরামর্শক সংস্থা ক্যানালিসের তথ্যানুসারে, সে বছরেই হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন উৎপাদন করে। নিষেধাজ্ঞার পর তারা একটি কারখানা বিক্রি করে দেয়, যেখানে তাদের স্মার্টফোনের এক-পঞ্চমাংশ উৎপাদন হতো।
তিন গবেষণা সংস্থার একটির মতে, এসএমআইসির এনপ্লাসওয়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিপ তৈরি করতে পারে হুয়াওয়ে, যদিও এ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চিপের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে মাত্র ৫০ শতাংশ। তবে বছরে তারা ২০-৪০ লাখ ইউনিট ফাইভজি প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টফোন বাজারজাত করতে পারবে বলে আশা করছে গবেষণা সংস্থাটি।
যদিও আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মনে করছে, হুয়াওয়ে বছরে এক কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারজাত করতে পারবে।
চলতি মাসে চায়না সিকিউরিটিস জার্নালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হুয়াওয়ে তার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে। শুরুতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল বছরে তিন কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারজাত করা। পরিমাণ বাড়িয়ে এখন তারা চার কোটি ইউনিটে উন্নীত করেছে। যদিও হুয়াওয়ে ফাইভজির বাজারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি তারা উল্লেখ করেনি।
এদিকে তিনটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরো বলেছে, হুয়াওয়ে চলতি বছর আইফোনের প্রতিদ্বন্দ্বী মডেল পি৬০-এর ফাইভজি ভার্সন নিয়ে আসতে পারে, যা বাজারে আসতে পারে ২০২৪ সালে। বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম হুয়াওয়ের স্মার্টফোনে ব্যবহার করা যায় না। এর সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপভিত্তিক অন্যান্য সেবাও ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। ফলে চীনের বাইরে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের চাহিদা খুব একটা নেই।