অ্যামাজন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তাদের ব্যবসায় ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে আছে ই–কমার্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, অনলাইন বিজ্ঞাপন, ডিজিটাল স্ট্রিমিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। একে পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি হিসেবে বলা হয়। অ্যালফাবেট, অ্যাপল, মেটা, মাইক্রোসফটের সঙ্গে অ্যামাজন এখন বড় পাঁচ (বিগ ফাইভ) মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির একটি, যা ১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ই–কমার্স সাইট অ্যামাজন ডটকমের আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছিল অনলাইনে বই বিক্রি দিয়ে। সেই অ্যামাজনে এখন পাওয়া যায় না এমন কিছু নেই বললেই চলে। সে কারণেই প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এমন একটি নাম খুঁজে বের করেছিলেন যেটিতে ইংরেজি বর্ণমালার প্রথম বর্ণ ‘এ’ থেকে শেষ বর্ণ ‘জেড’ রয়েছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি যাবতীয় পোশাক, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে। তবে একদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি অ্যামাজন। এর পেছনে রয়েছে ২৮ বছরের ইতিহাস। অনেক প্রতিবন্ধকতা পার হয়েই প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে।
১৯৯৫ সালের ১৬ জুলাই অনলাইনে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরুর এক বছর আগে ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের বেলেভ্যুতে জেফ বেজোস তার বাড়ির গ্যারাজে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি অনলাইনে বই বিক্রির ওয়েবসাইট ছিল। এরপর একাধিক ধরনের পণ্য নিয়ে আসে অ্যামাজন। ২০২২ সালে অ্যামাজনের নেট আয় ছিল ২৭২ কোটি মার্কিন ডলার, পরিচালন আয় ছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের বাবা-মায়ের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। অ্যামাজনের কর্মীদের অবদানও কম নয়। বর্তমানে অ্যামাজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১৫ লাখ ৪১ হাজার কর্মী। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখ।
প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বর্তমানে অ্যামাজনের চেয়ারম্যান। অ্যামাজনে তার রয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ার। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন অ্যান্ডি জ্যাসি। অ্যামাজনের প্রযুক্তি পণ্যগুলো হলো ইকো ফায়ার, ট্যাবলেট ফায়ার, টিভি ফায়ার এবং ওএস কিন্ডেল। সফটওয়্যার ও ওয়েবপণ্যগুলো হলো অ্যামাজন ডটকম, অ্যামাজন অ্যালেক্সা, অ্যামাজন অ্যাপস্টোর, অ্যামাজন লুনা, অ্যামাজন মিউজিক, অ্যামাজন পে, অ্যামাজন প্রাইম, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, টুইচ, রিং, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, অ্যামাজন রোবোটিকস।
দেশটির গণমাধ্যম সিএনবিসিকে অ্যামাজনের সিইও জেফ বেজোস জানান, ১৯৯৪ সালে অনলাইন বইয়ের দোকান চালু করার জন্য তিনি বাবা-মায়ের কাছ থেকে ২৭৫,৫৭৩ ডলার নিয়েছিলেন। যদিও এতে কতটা সাফল্য আসবে তা তিনি প্রথমেই অনুমান করতে পারেননি। তার মনে হয়েছিল, একশ শতাংশের মধ্যে ত্রিশ শতাংশ সফলতা আসতে পারে।
তিনি জানান, বাবা-মায়ের টাকাগুলো নষ্ট হতে পারে ভেবে মাঝেমাঝে মন খারাপ হতো। তবে হাল ছেড়ে দেননি। এ ব্যবসায় তাকে সব সময় সাহস জুগিয়েছেন তার মা। ফলে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। তার সেই কষ্টের ফলে আজ তিনি পৃথিবীর অন্যতম ধনী। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৯৩.৫ বিলিয়ন ডলার।
অ্যামাজনের ব্যবসা পুরো পৃথিবীতেই বিস্তৃত। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন ক্রেতা রয়েছে। এর সদর দফতর ওয়াশিংটন রাজ্যের সিয়াটলে।