সন্তানের অবস্থান অনুসরণ (ট্র্যাকিং) ও স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণের থার্ডপার্টি অ্যাপগুলো অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলছে অ্যাপল। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও অনধিকার তথ্য সংগ্রহ প্রতিরোধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাপল।
তবে বিনা নোটিসে অ্যাপ সরিয়ে ফেলার কারণে ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় এসব অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপের কথাও ভাবছে অনেকে।
অনেকে অভিযোগ করছেন, এসব অ্যাপের জনপ্রিয়তা দেখে নিজস্ব ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে অ্যাপল। এ কারণে তারা অ্যাপ স্টোর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপগুলো সরিয়ে ফেলছে। কারণ গত বছরের শেষের দিকে নিজস্ব স্ক্রিন টাইম টুল উন্মোচন করেছে এ মার্কিন টেক জায়ান্ট। এখন নিজেদের পথ মসৃণ করতেই অ্যাপ স্টোরে এ ধরনের জনপ্রিয় থার্ডপার্টি অ্যাপের সংখ্যা কমিয়ে আনতে শুরু করেছে তারা।
নিউইয়র্ক টাইমস ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে এমন ১৭টি স্ক্রিন টাইম ও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপের মধ্যে কমপক্ষে ১১টি মুছে ফেলা হয়েছে অথবা এর ব্যবহার সীমিত করে দিয়েছে অ্যাপল। এ অ্যাপগুলো অ্যাপ স্টোরের নীতিমালা মেনে চলছে না বলে অভিযোগ তোলা হলেও অ্যাপগুলোর অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, সবগুলোই অ্যাপলের অনুমোদিত।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অ্যাপল থার্ডপার্টি অ্যাপগুলো থেকে এমন কিছু ফিচার মুছে ফেলতে বাধ্য করেছে, যেগুলোর সহায়তায় সন্তানদের ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ অ্যাপ বা কনটেন্ট ব্লক করতে পারবেন অভিভাবকরা।
মুছে ফেলা কিছু অ্যাপের ছিল এমন হাজার হাজার গ্রাহক, যারা অর্থের বিনিময়ে সেবা নিতেন। এখন এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
বন্ধ হয়ে যাওয়া অ্যাপগুলোর অন্যতম একটি আওয়ারপ্যাক্ট। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ। গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি মুছে দেয়ার আগে পর্যন্ত এটি ৩০ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে। কোম্পানিটির ৮০ শতাংশ রাজস্ব আসত অ্যাপ স্টোর থেকে।
আওয়ারপ্যাক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমির মোসাভিয়ান বলেন, কোনো নোটিস ছাড়াই অ্যাপটি মুছে দেয়া হয়েছে। অ্যাপল মূলত পদ্ধতিগতভাবে এ ইন্ডাস্ট্রিকে হত্যা করছে বলে তার অভিযোগ।
বেশকিছু ডেভেলপার জানিয়েছেন, অ্যাপ স্টোরে টিকে থাকতে তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফিচার বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত টেক ক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনেও অ্যাপলের থার্ডপার্টি স্ক্রিন টাইম অ্যাপগুলো বন্ধের বিষয়টি প্রকাশিত হয়।
তবে অ্যাপলের মুখপাত্র ট্যামি লেভাইন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, গ্রাহকদের ডিভাইস থেকে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহের কারণেই এসব অ্যাপ মুছে ফেলা হয়েছে অথবা পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। একই কথা বলেন অ্যাপলের আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলিপ ডব্লিউ শিমার।
অ্যাপলের পক্ষ থেকে গ্রাহক স্বার্থের অজুহাত দেখানো হলেও অ্যাপ নির্মাতারা তা মনে করছেন না। তাদের বিশ্বাস, থার্ডপার্টি জনপ্রিয় অ্যাপগুলো কোম্পানির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করবে—এমন আশঙ্কার কারণেই তারা নিশানায় পরিণত হয়েছেন। এ-সংক্রান্ত অ্যাপলের টুলটিও কিন্তু স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে ততটা আগ্রহী নয় বলে তাদের অভিযোগ।
গত বছরের আগস্টে অ্যাপ স্টোর থেকে মুছে ফেলার আগে ৭ লাখ ৭০ হাজার বারের বেশি ডাউনলোড হয়েছিল স্ক্রিন টাইম অ্যাপ ফ্রিডম। কোম্পানিটির সিইও ফ্রেড স্টুত্জমান বলেন, অ্যাপলের পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থে গ্রাহকের সমস্যা সমাধানে সম্পৃক্ত নয়। অ্যাপল চায় মানুষ তাদের ফোনের পেছনে কম সময় ব্যয় করুক—এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
যদিও চলতি মাসে এক সম্মেলনে অ্যাপলের সিইও টিম কুক দাবি করেন, গ্রাহকরা যাতে নিজেদের স্ক্রিন টাইম পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করতে পারে, সেজন্যই স্ক্রিন টাইম টুল এনেছে অ্যাপল। আমরা চাই না মানুষ সর্বক্ষণ ফোন ব্যবহার করুক।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কম্পিটিশন অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে জনপ্রিয় দুই প্যারেন্টাল-কন্ট্রোল অ্যাপ কিডসলক্স ও কাস্টোডিও কর্তৃপক্ষ। কিডসলক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের অ্যাপটিতে এমন পরিবর্তন আনতে বাধ্য করা হয়েছে, যার ফলে অ্যাপলের টুলটির তুলনায় তা কম কার্যকরী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।