ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় এবং সহজ পার্থক্যটি হলো, মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্টার্যাক্ট করতে পারে। মানুষ ইন্টার্যাক্ট করতে পারে বলেই যে প্রতিষ্ঠানটির টিকে থাকার কথা ছিল না সেটি বিলিয়নস অব ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
মন্ত্রী ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ’- টিএমজিবি আয়োজিত ‘ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন: গণমাধ্যমের সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গতরাতে এসব কথা বলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমানা তৈরি করা বা পাহারা দেওয়ার সুযোগ নেই। ডিজিটাল দুনিয়ায় যোগ্যতা দিয়ে টিকে থাকা এবং যোগ্যতা অর্জন করার জন্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রযুক্তিকে সামনে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনভাবে বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে যা অন্য যেকোন গণমাধ্যমের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে ,বলেন মন্ত্রী।
পৃথিবী একদিন কাগজবিহীন হবে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি। ডিজিটাল অনিবার্য এবং রূপান্তর এখন অনিবার্য। এটি কেবল গণমাধ্যম নয় ,এটি আমাদের জীবনযাপন, প্রচলিত শিক্ষা,অর্থ-বাণিজ্য নিরাপত্তা যেদিকেই তাকাই না কেন এসবের ডিজিটাল রূপান্তর অনিবার্য হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনের পঞ্চম প্রজন্মের আবির্ভাবের ফলে বিদ্যমান প্রযুক্তির অভাবনীয় বিপর্যয়ের শংকা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ৫জি‘র ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, শিল্প-বাণিজ্য- কলকারখানা কী পর্যায়ে দাঁড়াবে কেউ তা আন্দাজ করতেও পারছেন না। আমাদের ভাবতে হবে সেই সময়টার জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান জীবনধারা থেকে শিক্ষাব্যবস্থা , মিডিয়া সমস্ত কিছুই প্রথম শিল্প বিপ্লবের ফলাফল।
মোস্তাফা জব্বার ফেসবুক বিজ্ঞাপনকে ক্রসবর্ডার উল্লেখ করে বলেন, দুনিয়ার যে কোন প্রান্ত থেকে মানুষ বিজ্ঞাপন দিচ্ছে – প্রচারিত হচ্ছে। ফেসবুকের বিজ্ঞাপন যেরকম চ্যালেঞ্জিং, ফেসবুকের নিরাপত্তাও একইভাবে চ্যালেঞ্জিং।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিনতম কাজ। একাজটি এককভাবে করা আরও কঠিন। সেই কারণে প্রযুক্তিকে ঠেকানো সম্ভব হবে না। আমরা প্রযুক্তি দিয়েই প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে চীনের নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম উইচেট এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় স্থানীয় বিষয়বস্তু দিয়ে এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে যা বাংলাভাষী মানুষদের জন্য আকর্ষণ তৈরি করতে পারে।
গত দশ বছরে দুরদৃষ্টি সম্পন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে বাংলাদেশের অগ্রগতি বর্ণনা করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে প্রযুক্তিতে শতশত বছর পিছিয়ে থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বের ৮০টি দেশে সফটওয়্যার রপ্তানি করছে। আয়ারল্যান্ড এবং মহারাষ্ট্রের পুলিশ বাংলাদেশের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। একদিন আমাদের সন্তানদের তৈরি সামাজিক মাধ্যম নিয়ে সারা দুনিয়া আলোচনা করবে।
অনুষ্ঠানে অ্যাটকো সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু এবং অ্যামটব সেক্রেটারি জেনারেল ব্রি; জে. (অব.) এস এম ফরহাদ এবং টিএমজিবি আহ্বায়ক মুহম্মদ খান বক্তৃতা করেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টি আই এম নুরুল কবীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।