ল্যাপটপ, ট্যাবলেটসহ ব্যক্তিগত কম্পিউটার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টদের মতে, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে দেশটির সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
নতুন নীতিমালার অধীনে বর্তমানে ভারতে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের পণ্য আমদানির জন্য আলাদা লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। এটি নিষিদ্ধ জিনিস আমদানির জন্য নির্ধারিত। এ উদ্যোগের কারণে অ্যাপল, লেনোভো, এইচপি, আসুস, স্যামসাংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন থেকে কোম্পানিগুলোকে ভারতের বাজারে পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে।
ভারতের বাজারে বর্তমানে যেসব ল্যাপটপ ও ব্যক্তিগত কম্পিউটার রয়েছে সেগুলো চীনে তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে প্রযুক্তি বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরিতে আগ্রহী ভারত। এরই মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে কারখানা স্থাপনসংক্রান্ত আলোচনাও করছে। নতুন বিধিনিষেধের মাধ্যমে ভারত সরকার কোম্পানিগুলোকে ভারতে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে জানাচ্ছে।
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ এ নির্দেশনার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। মূলত ভারত কীভাবে ইলেকট্রনিকস পণ্য আমদানির বিষয়টি দেখছে ও এতে পরিবর্তন আনতে চাইছে সেটিই এখানে প্রকাশ করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, এইচএসএন ৮৭৪১-এর অধীনে যেসব ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, অল-ইন ওয়ান পারসোনাল কম্পিউটার ও সার্ভার রয়েছে সেগুলোর আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কেউ আমদানি করতে চাইলে আলাদাভাবে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।
ব্যক্তিগতভাবে যারা বিদেশ থেকে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, কম্পিউটার ও ছোট ফর্ম ফ্যাক্টর কম্পিউটার ভারতে নিয়ে আসবে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। ই-কমার্স প্লাটফর্ম ও কুরিয়ারের মাধ্যমে কোনো পণ্য আনা হলে সেগুলোর ওপর এ বিধিনিষেধ কার্যকর হবে না।
নতুন নীতিমালার অধীনে ২০টি উপাদান আমদানির সুযোগ পাবে কোম্পানিগুলো। মূলত গবেষণা, পরীক্ষা, মেরামত, পুনঃরফতানি, পণ্যের উন্নয়নে ব্যবহৃত উপাদান আমদানিতে এ ছাড় পাওয়া যাবে। যে কারণে এসব পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে শুধু সেসব কাজই করা যাবে বলে জানানো হয়েছে। কোনো পণ্য বিক্রি করা যাবে না।
সুতরাং বলা যায়, যে কেউ চাইলে বিদেশ থেকে ভারতে ল্যাপটপ ও ট্যাব আনতে পারবে কিন্তু সেগুলো পুনরায় বিক্রি করতে পারবে না। এছাড়া ডিভাইসগুলো আনার জন্য ব্যবহারকারীদের কাস্টমস ফি প্রদান করতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ২০ বারের বেশি পণ্য কিনে থাকে তাহলে নীতিমালা অনুযায়ী কী কারণে সেগুলো আমদানি করা হয়েছে সে বিষয়ে জানাতে হবে।
প্রযুক্তি পণ্য আমদানিতে একক দেশনির্ভরতা কাটাতেই ভারত সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল নাগরিকদের নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ উদ্যোগ ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে চাইছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বাসযোগ্য অংশীদাররা হয়তো আমদানির জন্য বৈধ লাইসেন্স পাবে।
অন্যদিকে ডেল, এইচপি ও সিসকো ভারতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু ও বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ উদ্যোগ কার্যকর হলে দেশটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনাকারীরা প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা পাবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা।