সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচিত মুখ নওরীন আফরোজ। মাত্র ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রীতিমতো এলেমেলো করে দিয়েছিল তার জীবন। ভিডিওতে অবিকল নওরীনের মতো এক নগ্ন নারীকে দেখা যায়। পরে জানা যায় পুরোটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির কারসাজি।
এভাবেই ডিজিটাল দুনিয়ায় নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডিপ ফেক ভিডিও। ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের প্রাইভেট ম্যাসেজিং চ্যানেলে একটি শক্তিশালী এআই বট ব্যবহার করে এমনটা করা হচ্ছে। ডিপ ফেক ভিডিওতে চেহারার এতোই মিল থাকে যে ভুক্তভোগী সামাজিকভাবেও হেয় হচ্ছেন।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে একজনের মুখ অন্য শরীরে জোড়া দেওয়া হচ্ছে। এরপর সে ছবি বা ভিডিও জমা হচ্ছে মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে। সেখান থেকে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম আর ওয়েবসাইটে। এ অবস্থায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের তাগিদ দেন তারা।
গবেষণা মাধ্যম সাইবার নিউজ বলছে, এমন ডিপফেক কন্টেন্টের সংখ্যা প্রতি ছয় মাসে দ্বিগুণ হচ্ছে। ২০২০ সালে প্রতিমাসে এমন ঘটনা ঘটতো গড়ে আড়াই হাজার। এখন সেটি এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
এআই ব্যবহারকারী ফ্রি-ল্যান্সার সুমন সাহা বলেন, কোনো মানুষকে হেয় করতে প্রযুক্তি এমন অপব্যবহার এর আগেও হয়েছে। তখন বিভিন্ন গ্রাফিক্স অ্যাপ ব্যবহার করে এমন করা হয়েছে। হালে এআইয়ের টুল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখন এগুলো সহজলোভ্য হওয়ায় এর প্রবণতা বাড়ছে।
কেউ এমন অবস্থার শিকার হলে নিজে থেকে বিষয়টি সম্পর্কে অন্যকে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি ওই কনটেন্টগুলোতে রিপোর্ট করার পরামর্শ দেন সুমন।
সুমন বলেন, সোস্যালে ছবি, ভিডিও আপলোড বন্ধ করা এর আসল সমাধান নয়। তবে সচেতন থাকতে হবে। এমন কোনো কনটেন্ট সামনে এলো এটিই যে সত্য, এমন ধারনা করা ঠিক হবে না। প্রযুক্তি নিয়ে এমন অনাচারকে পাত্তা না দিলে এমনিতেই এর ব্যবহার কমে যাবে।
এদিকে এক ভিডিও বার্তায় নওরীন বলেন, এমন অনাকাঙ্খিত কিছু যেকারো সঙ্গে ঘটে যেতে পারে। তাই এমন কিছু সামনে আসা মাত্র তা বিশ্বাস না করে মাথা খাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এমনকি কেউ এমন ভিকটিম হলে তাকে হেয় করার বদলে সাপোর্ট করে যেতে হবে, যেন এমন পরিস্থিতি সে লড়ে যেতে পারে। যদি এর বিপরীত করা হয় তবে পরিবারটির অবর্ণনীয় কষ্টে পড়ে যায়।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভির হাসান জোহা বলেন, ডিপফেকের কারসাজিতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে আছেন সেলিব্রেটি, রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, সাংবাদিক এবং তরুণ-তরুণীরা। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অপ্রয়োজনীয় ছবি বা ভিডিও আপলোড এড়াতে হবে।