২০২৩ সালের প্রথমার্ধে মনিটর রফতানিতে বড় অবনমন দেখতে পেয়েছে চীন। সম্প্রতি রুন্টো টেকনোলজি প্রকাশিত তথ্যসূত্রে এটি জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বছরওয়ারি হিসেবে এ সময় দেশটির মনিটর রফতানি ২৪ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ইউনিটে নেমে এসেছে। খবর গিজমোচায়না।
রফতানি মূল্যতেও বড় ধরনের পতন হয়েছে, যা সার্বিক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছর মোট রফতানি ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৮৩ কোটি ইউয়ান বা ৬৮৪ কোটি ডলারে স্থিত হয়েছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে বাজার চাহিদা উল্লেখজনক হারে কমেছে। এ সময় রফতানির পরিমাণ ৭৩৪ কোটি ইউনিটে চলে আসে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে বছর এগোনোর সঙ্গে পুনরুদ্ধারের আশাও তৈরি হয়েছে। পূর্ব ইউরোপ ও চীনের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সহযোগিতার কারণে এটি সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চীনের বাজার প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে তা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় কম। উত্তর আমেরিকাতেই চীন মূলত মনিটর রফতানি করে। কিন্তু ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে এ বাজারে বড় ধরনের অবনমন দেখা গেছে। মোট রফতানির ২৭ শতাংশ এ অঞ্চলকেন্দ্রিক। এখানে বছরওয়ারি হিসেবে রফতানি ৩৮ শতাংশ কমে ১ কোটি ৫৮ লাখ ইউনিটে নেমে এসেছে। এ বাজারে ৯১ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দেশটি বছরওয়ারি হিসেবে ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ অবনমন দেখতে পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর এশিয়ার বাজার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্রহণকারীর জায়গা দখলে রেখেছে। বৈশ্বিক বাজার হিস্যায় বাজারটির ২৬ দশমিক ২ শতাংশ দখলে রয়েছে অঞ্চলটির। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পশ্চিম ইউরোপে মোট রফতানির ২২ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এ অঞ্চলটিও আগের বছরের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ অবনমনের শিকার হয়েছে।
বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের রফতানি ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ে শক্ত অবস্থানে ছিল এবং ৫৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে। বাণিজ্য বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে চীন বর্তমানে মনিটর রফতানিতে হিমশিম খাচ্ছে এবং অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
মনিটরের বাজারে যখন দেশটি পিছিয়ে তখন সেখানকার কোম্পানি লেনোভোও ব্যবসা কার্যক্রম পরিবর্তনের কথা ভাবছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আয় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনের অন্যতম প্রযুক্তি কোম্পানি লেনোভো গ্রুপ। এ সময় কোম্পানিটির আয় ১ হাজার ২৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ডলার আয়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। বছরওয়ারি হিসেবে যা ২৪ শতাংশ কম। নিট মুনাফার পরিমাণ ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
কোম্পানিটি কম্পিউটার ব্যবসার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছে। লেনোভোর দাবি, এটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে এবং চলতি বছরের শেষের দিকে পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুত। এছাড়া কোম্পানিটি কম্পিউটার খাতের বাইরে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে লেনোভো বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালিত অ্যাপ্লিকেশনের উন্নয়নে কাজ করছে।
লেনোভো গ্রুপের তথ্যানুযায়ী, ইনভেন্টরিতে সামঞ্জস্য আনার জন্যই মূলত মুনাফা কমেছে। তবে মুনাফা কমলেও কোম্পানিটি বছরওয়ারি হিসেবে পরিচালন ব্যয় ১১ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। এতে ৮৫ কোটি ডলার ব্যয় কমানো গেছে। ব্যবসায়িক খাতের হিসেবে ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনসহ স্মার্ট ডিভাইস বিজনেস গ্রুপটি মুনাফার দিক থেকে আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ অবনমন দেখতে পেয়েছে। পরিচালনগত মুনাফাও ৩৯ শতাংশ কমে ৬৫ কোটি ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।
ভূরাজনৈতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে লেনোভো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমেছে। স্মার্ট ডিভাইসেস বিজনেস গ্রুপের মুনাফা কমলেও উত্তর আমেরিকায় কোম্পানিটির ইনভেন্টরি কভিড-১৯ মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থায় চলে এসেছে বলে জানা গেছে।
চীন ব্যতীত এশিয়া-প্যাসিফিকের অন্যান্য অঞ্চলে লেনোভোর মুনাফা ১৭ শতাংশ কমেছে। একইভাবে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বাজারে রাজস্ব বছরে উল্লেখযোগ্য ২৯ শতাংশ কমেছে। এছাড়া লেনোভো গ্রুপের অভ্যন্তরীণ বাজার চীনেও বছরওয়ারি হিসেবে মুনাফা ২৯ শতাংশ কমেছে। কম্পিউটারের পাশাপাশি অবকাঠামো নির্মাণ ব্যবসায় চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেই মূলত এ অবনমন হয়েছে।