আমাদের প্রতিদিনের নিত্যসঙ্গী নিঃসন্দেহে হাতের স্মার্টফোনটি। তাইতো এর চার্জ চলে গেলেই আমরা ভুগি একধরনের মানসিক অশান্তিতে, একে বলা হয় ‘চার্জিং অ্যানজাইটি’। স্মার্টফোন দুনিয়ায় অনেক বদল আসলেও এখনো এই দুশ্চিন্তা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যায়নি। একটি ডিভাইসের চার্জিং সক্ষতা এর হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশনের অন্যতম অংশ। ম্যানুফেকচারার কোম্পানিগুলোও সেদিকে দিন দিন আরো বেশি নজর দিচ্ছে এবং ফ্ল্যাশ চার্জিং প্রযুক্তির মতো যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্ম হচ্ছে। অপো’র সুপারভুকও এই ফ্ল্যাশ চার্জিং এর একটি জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। অপো’র সুপারভুক এর সাথে এবার চার্জিং হবে ‘সুপার’ গতির।
‘সুপারভুক’ নিঃসন্দেহে চার্জিং জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। দারুণ সব ফিচার নিয়ে ‘ভুক’ চার্জিং পদ্ধতি স্মার্টফোনপ্রেমীদের একইসাথে দিচ্ছে গতি ও স্বাচ্ছন্দ্য। তবে প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তিতে ঠিক কতটা দ্রুত চার্জ হয়?
ঝামেলাবিহীন ও দ্রুত চার্জের জন্য সুপারভুক-এ রাখা হয়েছে হাই-ভোল্টেজ এবং লো-কারেন্ট চার্জিং এর নিখুঁত সমন্বয়। এর বিশেষ ধরনের চার্জিং পদ্ধতিতে ‘প্রোপ্রাইটারি অ্যাডাপ্টর’ এবং ‘ক্যাবল’ এর দরকার হয়। উচ্চ মাত্রার পাওয়ার লেভেল ও বুদ্ধিদীপ্ত সব অ্যালগরিদম ব্যবহারের মাধ্যমে ভুক কোনো ধরনের ব্যাটারি ওভারহিটিং ছাড়াই দ্রুতগতিতে চার্জ করতে সক্ষম। আর তাই বর্তমানে সহজলভ্য দ্রুততম চার্জিং প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে অন্তর্ভুক্ত, যেটিতে রয়েছে ৬৭ ওয়াট পাওয়ার ডেলিভারি এবং অন্যান্য ‘অ্যাডাপ্টেবল’ ফিচার সমূহ।
তবে মনে রাখতে হবে, সুপারভুক অ্যাডাপ্টার এর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ (নন-কম্পাটিবল) ‘ক্যাবল’ ব্যবহারের ফলে ‘ভোল্টেজ’ এর পরিবর্তে ‘কারেন্ট’ চার্জিং প্রবণতার কারণে চার্জিং স্পিড একেবারেই কমে যায়। তাই সর্বোচ্চ চার্জিং স্পিড পেতে একটি উপযুক্ত ‘ক্যাবল’ ব্যবহার করতে হবে, যা কি না ভোল্টেজকে প্রাধান্য দেয়– এবং অন্যান্য সাধারণ ক্যাবল থেকে ভিন্ন।
ম্যানুফেকচারাররা প্রায়ই ‘হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন’ নিয়ে একটি প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে, যেটিকে টেক বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন ‘নাম্বার গেম’। র্যাম, স্টোরেজ, মেগাপিক্সেল, ব্যাটারি লাইফ এবং চার্জিং দক্ষতা– এসবের নির্দিষ্ট ‘নাম্বার’ উল্লেখ এর ফলে একজন গ্রাহক তথ্য জেনে এরপর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কেননা ‘ফোনটা দারুণ, কিন্তু ব্যাটারি কতক্ষণ চলবে?’ এমন প্রশ্নকে ঘিরে ব্যবহারকারীরা প্রায়শই দুশ্চিন্তা করেন।
বিভিন্ন ধরনের চার্জিং স্পিড নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি ‘সুপারভুক’ আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্যও পরিচিত। যেমন অপো এ৭৮ স্মার্টফোনে থাকা ৬৭-ওয়াট সুপারভুক আলট্রা-ফাস্ট ফ্ল্যাশ চার্জিং প্রযুক্তি। সারাদিন ধরে কাজ করার প্রয়োজন হলে বা কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে অসংখ্য ছবি তুলতে চাইলে মাত্র ১৫ মিনিটের চার্জিংয়ে এই স্মার্টফোনের ব্যাটারি ০% থেকে ৪৩% এ বুস্ট করা যায় এবং মাত্র ৪৫.৩৭ মিনিটে পুরোপুরি চার্জ দেয়া সম্ভব।
অন্য শীর্ষ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোও গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের’ চার্জিং প্রযুক্তির উদ্ভাবনে কাজ করছে। প্রতিটি ব্র্যান্ডই তাদের ডিভাইসের চার্জিং এর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন বিষয়ে, যেমন- ‘হিট জেনারেশন’, ‘দ্রুতগতির রিটেনশন’ এবং ‘ওয়্যারলেস সক্ষমতার ওপর’ গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের এ যাত্রাকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে, ‘সুপারভুক’ প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে আসা কোম্পানিও ২০২২ সালে ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’ নামক বার্সেলোনায় আয়োজিত, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির বার্ষিক ইভেন্ট এ ২৪০-ওয়াট এর ফ্ল্যাশ চার্জিং প্রযুক্তি তুলে ধরেছে। ভবিষ্যৎ-বান্ধব ফ্ল্যাশ চার্জের মাধ্যমে মাত্র ৯ মিনিটেই শতভাগ ব্যাটারি চার্জ হয়ে যায়, যা কি না এই ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ‘স্পিড রেকর্ড’।
‘সুপারভুক’ এর আগমন স্মার্টফোন চার্জিং এর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এর উদ্ভাবনী কৌশলের ফলে এই কোম্পানিটি ফাস্ট-চার্জিং দুনিয়ায় অগ্রগণ্য কোম্পানি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। উন্নত চার্জিং প্রযুক্তির ফলে ২৩টিরও বেশি কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় স্থাপন হয়েছে এবং চার্জিং অভিজ্ঞতা সকলের জন্যই আরো সমৃদ্ধ করতে নির্দিষ্ট কোম্পানিটির প্রতিশ্রুতি আরো দৃঢ় হয়েছে। ‘সুপারভুক’ এর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোনো ধরনের ওভারহিটিং ছাড়াই সর্বোচ্চ ডিভাইস পারফর্ম্যান্স নিশ্চিত ও দ্রুতগতির চার্জিং সরবরাহ করা। স্মার্টফোন চালু ও সক্রিয় থাকা অবস্থায় সাধারণ মানের ডিভাইসগুলোতে চার্জিং-এ সীমাবদ্ধতা তৈরি হয় কিন্তু ‘ভুক’ প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন সর্বোচ্চ চার্জিং সম্ভব। এছাড়াও একবার ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হবার পর এই পাওয়ার সাপ্লাই স্বাভাবিকভাবেই ১০০% এ গিয়ে থেমে যায়, কোনোরকম ওভারচার্জিং হয় না। এই প্রযুক্তিতে ‘ইন্টেলিজেন্ট চিপ’ দ্বারা পরিচালিত অ্যাডাপ্টার, চার্জিং কেবল, স্মার্টফোন এবং ব্যাটারিসহ ক্রিটিক্যাল নোডে বহু-স্তরবিশিষ্ট সুরক্ষা রয়েছে।