ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন,স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্ম আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি আমার জীবনের সবটুকু শক্তি দিয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল দক্ষতা প্রদানের লড়াই চালিয়ে যাব। আজকের তরুণদের ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে পারলে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য অর্জনে ডিজিটাল প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন স্মার্ট মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ যাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
মন্ত্রী আজ বুধবার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল কিশোরগঞ্জ শাখা আয়োজিত অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী প্রচলিত শিক্ষার বাইরে উন্নত দুনিয়ার আদলে যুগোপযোগী শিক্ষা প্রচলন ও প্রসারে তার গৃহীত উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, বাড়ি – গাড়ি বড় সম্পদ নয়। সন্তানের সুশিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করার চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। ডাক ও টেলিযোাগাযোগ মন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট মানুষ চেয়েছেন উল্লেখ করে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তুমি স্মার্ট হলে বাংলাদেশ স্মার্ট হবে।
শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখনকার যুগে বাস করে তোমরা যদি কোন ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে না পার তবে তোমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। প্রচলিত শিক্ষা প্রতিনিয়তই বদলাচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাগুজে বইকে বিদায় করে ডিজিটাল মাধ্যমে তোমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন প্রতিটি শিক্ষার্থী ব্যাগে বই নয়, একটি ল্যাপটপ নিয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য অঞ্চলে ২৮টি পাড়াকেন্দ্রে ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রা শুরু করেছি। আরও একহাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় এই কর্মসূচির আওতায় আনার কাজ চলছে।
১৯৯৭ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া নামের ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, রাজধানীর গুলশানে একটি বৃটিশ স্কুলে কম্পিউটারে পাঠদান আমাকে আলোড়িত করেছিল। বলা যেতে পারে ডিজিটাল স্কুল প্রতিষ্ঠার ধারণাটি আমি সেখান থেকেই গ্রহণ করি। মন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লাইব্রেরী।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন স্মার্ট ফোনের সঠিক ব্যবহার করে তুমি তোমার জ্ঞান অর্জন করে সেরাদের সেরা হতে পার। আবার এই ফোনের অপব্যবহার করে তুমি তোমার শিক্ষা জীবনকেই নষ্ট করে ফেলতে পার। তোমার উপরই নির্ভর করবে তোমার পরিবার, সমাজ সর্বোপরি দেশের রূপান্তর। তিনি বলেন, সবার উপরে দেশ। দেশের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।
মন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন বাংলাদেশই প্রথম পৃথিবীতে তার দেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবেও পৃথিবীতে বাংলাদেশই প্রথম দেশ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল এবং তা বাস্তবায়নও হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ডিজিটাল বৃটেন, ২০১৪ সালে ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং ২০১৯ সালে পাকিস্তান ডিজিটাল পাকিস্তান করার ঘোষণা দিয়েছে। । স্মার্টনেসের সংজ্ঞা বদলে এখন তথ্য-প্রযুক্তিতে যার জ্ঞান যত বেশি তাকে তত স্মার্ট বলা হয়। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যারা পড়ছো, তারা সৌভাগ্যবান। কেননা সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে ডিজিটাইজ করছে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল অনেক আগেই তা করেছে।
আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল কিশোরগঞ্জ শাখার চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম রিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিজয় ডিজিটালের সিইও জেসমিন জুই বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
বিজয় ডিজিটালের সিইও জেসমিন জুই শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বিষয়ক তার উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক একটি দক্ষ জাতি বিনির্মাণ সম্ভব। তিনি প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রম ডিজিটাল কনটেন্টে রূপান্তরে তার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, স্মার্ট জাতি বিনির্মাণে স্মার্ট শি্ক্ষার বিকল্প নাই।
এর আগে মন্ত্রী স্কুলের শ্রেণি কক্ষ ঘুরে দেখেন। এসময় তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় করেন।